চট্টগ্রাম মহানগরের জামাল খান এলাকায় প্রকাশ্যে দিন-দুপুরে ছুরিকাঘাতে স্কুলছাত্র আদনান ইসফার (১৫) খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে চারজনকে ফটিকছড়ি উপজেলার সমিতিরহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ফয়সালের বাড়ি থেকে এবং একজনকে নগরীর বাদুরতলা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- নগরীর চান্দগাঁওয়ের হাজেরা তজু কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মঈন খাঁন, সাব্বির খান ও মুনতাছির মোস্তফা, চকবাজার ডিসি রোডের হলি ফ্লাওয়ার স্কুলের এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী এখলাছ উদ্দীন আরমান এবং ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে সদ্য এইচএসসি পাস করা আবদুল্লাহ আল সাঈদ। তাদের সবার বয়স ১৮ বছর। বৃহস্পতিবার বিকালে নগর পুলিশের কার্যালয়ে এ তথ্য জানানো হয়।

কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আদনান খুনের ঘটনায় তার বাবা আকতারুল আজম ৫ জনের নাম উল্লে­খ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।’ পুলিশ জানায়, আদনান খুনে গ্রেফতার হওয়া পাঁচজনই নগরীর চকবাজার-গণি বেকারি এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রাম কলেজ-মহসিন কলেজে আধিপত্য বিস্তারের জন্য কিশোর বয়সী এসব কর্মীদের ব্যবহার করেন চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রউফ। হত্যাকারে সময় খুনিরা যে পিস্তল ব্যবহার করে হয় সেটিও বড় ভাইদের।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ বলেন, ‘ঘটনার ভিডিও ফুটেজ এবং গ্রেফতার পাঁচজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, সপ্তাহ খানেক আগে মহসিন কলেজের মাঠে খেলা নিয়ে খুন হওয়া আদনান ও তার বন্ধুদের সঙ্গে জামালখানের আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্রের কথা কাটাকাটি হয়। ঘটনার দিন ১৬ জানুয়ারি দুপুর ১টার দিকে আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্রকে জামালখান মোড়ে দেখে ধাওয়া দেন আদনান ও তার কয়েকজন বন্ধু। এ সময় মঈন, সাব্বির, সাঈদ, আরমান ও মুনতাছির এবং আরও তিনজন রাজনৈতিক বড় ভাই তখন জামালখানের একটি হোটেলে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ধাওয়া খেয়ে আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্র তখন দৌঁড়ে ওই হোটেলে ঢুকে পড়ে। সেখানে আড্ডারত বড় ভাইদের সাহায্য চান তারা। তখন মঈন, সাব্বির, সাঈদ, আরমান ও মুনতাছির হোটেল থেকে বেরিয়ে আদনানদের পাল্টা ধাওয়া দেন। তখন আদনানকে ফেলে তার বন্ধুরা পালিয়ে যায়। সাব্বির এসে আদনানের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মেরে ফেলার ‍হুমকি দেন এবং কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। আদনান ও সাঈদ লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। আদনান দৌঁড়ে পালানোর সময় জামালখানে খাজা আজমির ওয়ার্কশপের সামনে একটি অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা লেগে রাস্তায় পড়ে যান। উঠে আবারও দৌঁড়ে পালানোর সময় মুনতাছির পেছন থেকে টি-শার্ট টেনে ধরলে পেছনের অংশ ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। তখন মঈন সামনে থেকে এসে আদনানের পেটের একপাশে ছুরিকাঘাত করে। এরপর চারজন পেছনদিকে গণি বেকারির দিকে চলে যায়। আদনান জামালখান মোড়ে খাস্তগীর স্কুলের দিকে দৌঁড়ে যাবার সময় বারবার পেছন ফিরে রক্ত দেখছিল। কিন্তু একপর্যায়ে সে লুটিয়ে পড়ে। তবে মঈন তার পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে খাস্তগীর স্কুলের কাছাকাছি পর্যন্ত যান।’

এডিসি রউফ বলেন, বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনায় জড়িতরা আদনানের মৃত্যুর খবর পান। এরপর তারা বাদুরতলা এলাকায় চলে যান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা ফটিকছড়ির সমিতিরহাটে জনৈক ফয়সালের বাড়িতে পৌঁছান। ফয়সাল সমিতিরহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশের একাধিক সূত্র।’ নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, হত্যাকাণ্ডে রউফের সম্পৃক্ততা আমরা এখন স্পষ্ট হয়নি। তবে সম্পৃক্ততার তথ্য পেলে তাকেও গ্রেফতার করা হবে। বড় ভাই, ছোট ভাই যাদের বিষয়ে তথ্য পাব, তাদের গ্রেফতার করব।’