টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে চার দিন বিরতি দিয়ে শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে পবিত্র হজ্বের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত তাবলীগ জামাতের ৩দিন ব্যাপি বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। পথে পথে নানা ভোগান্তি উপেক্ষা করে দেশের ১৩ জেলা থেকে মুসুল্লিদের কাফেলা আসছে টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা স্থলে। ইতোমধ্যে অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশ গ্রহন ও মুসুল্লিদের আগমনে টঙ্গীর এজতেমাস্থল এবং আশপাশের এলাকা এখন মুসুল্লিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রথম পর্বের তুলনায় এপর্বে শীতের তীব্রতা হ্রাস পেয়েছে। এজতেমাস্থলে মুসল্লিদের এবাদত বন্দিগিতে মশগুল আবহ বিরাজ করছে। শিল্প নগরী টঙ্গী এখন যেন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসুল্লিরা জামাতভূক্ত হয়ে এখনো এজতেমাস্থলের দিকে ছুটে আসছেন। আসছেন বিদেশী মুসল্লীরাও। শুক্রবার জুমা’বার হওয়ায় লাখো মুসল্লীর ঢল নামে টঙ্গীর তুরাগ তীরে। নামাজের আগেই এজতেমার পুরো প্যান্ডেল ও ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। প্যান্ডেলের নিচে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা অংশ নেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশেপাশের সড়ক ও গলিগুলোর ওপরে। রবিবার আখেরি মোনাজাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুসল্লিদের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। এদিকে এজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে এবারের এপর্বেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। কাল (রবিবার) আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমা শেষ হবে।

শুক্রবার বাদ ফজর তাবলীগ জামাতের বাংলাদেশের মাওলানা ফারুক হোসেন এর আ’মবয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব এজতেমার ২য় পর্বের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। মূলম থেকে দেয়া এ বয়ান বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ (তরজমা) করে প্রচার করা হয়। শুক্রবার দুপুরে বৃহত্তম জুম্মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নামাজের ইমামতি করেন বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম পেশ ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়ের। এতে লাখ লাখ মুসুল্লি অংশ নেন।

বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বে পুরো ময়দানকে ২৮টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এতে ঢাকাসহ (একাংশ) দেশের ১৩টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। এদিকে নিরাপত্তা চাঁদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো বিশ্ব এজতেমা ময়দানকে। ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা যাতে টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমাস্থলে স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপদে পৌছতে পারে সেজন্যও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাজীপুরে র‌্যাব ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
রবিবার (২১ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব এজতেমা। মোনাজাতের আগ পর্যন্ত তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বীরা পর্যায়ক্রমে আখলাক. ঈমান ও আমলের উপর বয়ান পেশ করবেন। বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুক বিহীন বিয়ে এপর্বের দ্বিতীয় দিনেও অনুষ্ঠিত হচ্ছেনা।
বৃহত্তম জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত ॥ বিশ্ব এজতেমার শুরুর দিন জু’মা বার হওয়ায় এজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহত্তম জু’মার জামাত। জু’মা নামাজের ইমামতি করেন তাবলিগ জামাতের মুরুব্বি বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম পেশ ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়ের। এজতেমায় যোগদানকারী মুসুল্লী ছাড়াও জু’মার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশে-পাশের এলাকার লাখ লাখ মুসুল্লী এজতেমাস্থলে হাজির হন। প্রথম পর্বের তুলনায় এপর্বে শীতের তীব্রতা কম হওয়ায় ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশে-পাশের এলাকা থেকে এজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। জুমার নামাজ আদায় করতে রাজধানীর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি ছুটে আসেন। এজতেমার মাঠ উপচিয়ে জামাত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের পাশ ঘেঁষে এজতেমা মাঠের উত্তর দিকের রাস্তায়ও জামাত দাঁড়ায়। মূল প্যান্ডেলে জায়গা না পেয়ে অগণিত মুসুল্লিদের রাস্তায় কিংবা মহাসড়ক ও খোলা জায়গার উপর খবরের কাগজ, জায়নামাজ, পলিথিন ও হোগলা বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। আয়োজকদের ধারণা, দেশের স্মরণকালের বৃহত্তম এ জুমার নামাজে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় এবার প্রায় ১০ লক্ষাধিক মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করেছেন। বাদ ফজর হতে মাগরিব পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ ঈমান, আমল ও দাওয়াতের মেহনত স¤পর্কে অত্যান্ত ফজিলতপূর্ণ সারগর্ভ বয়ান করেন।

দ্বিতীয় দফার প্রথম দিনে যারা বয়ান করেন ॥ শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্যমে এজতেমার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহষ্পতিবার বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা আব্দুল রেহমান রাভিয়ানা বয়ান করেন। শুক্রবার বাদ ফজর বাংলাদেশের মাওলানা ফারুক হোসেন এবারের এজতেমার দ্বিতীয় পর্বের কার্যক্রম শুরু করেন। বাদ জু’মা থেকে ভারতের মাওলানা শেখ আহমদ মাসুদ, বাদ আসর থেকে ভারতের মাওলানা ইউনুছ পলানপুরী ও বাদ মাগরিব- ভারতের হযরত মাওলানা আকবর শরীফ বয়ান করেন বলে জানান বিশ্বইজতেমার মুরুব্বী ইঞ্জিনিয়ার মোঃ গিয়াস উদ্দিন। বয়ানে বিশিষ্ট আলেমগণ বলেন, পরকালের চিরস্থায়ী সুখ শান্তির জন্য আমাদের প্রত্যককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বীনের দাওয়াতের কাজে কঠিন মেহনত করতে হবে। ঈমান আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবেনা।

প্রথম দিনের বয়ানে যা বলা হয় ॥ বয়ানে বলা হয়, জুম্মারদিন, একটি পবিত্রদিন, সপ্তাহের সেরা দিন। সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুম্মার দিন। এটি হলো সবচেয়ে বড় ও সম্মানি দিন। এটি দু’ ঈদের চেয়েও ফজিলতপূর্ণ। এদিনে হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়। এদিনই দুনিয়া ধ্বংস হবে। এদিনে আল্লাহ্র কাছে যা চাইবে, আল্লাহ তা তাকে দেবেন। জুমা’র নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে গোসল-ওজু করে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর থেকে তার নেকী লেখা হয়। আমরা যা করবো আল্লাহকে রাজি করার জন্য করবো। আল্লাহ পাকের হুকুম মতো আমরা যেন সারা জীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে।

বিভিন্ন ভাষায় বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ ॥ বিশ্ব এজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের ১৫-২০জন শুরা সদস্য ও বুজর্গ পর্যায়ক্রমে বয়ান পেশ করেন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষনিক অনুবাদ হচ্ছে। বিদেশী মেহমানদের জন্য মূল বয়ান মে র উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসুল্লীরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরুব্বী মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান।
ভিআইপিদের জুমার নামাজ আদায় ॥ বিশ^ এজতেমার দ্বিতীয় পর্বে প্রথম দিন শুক্রবার এজতেমা ময়দানে অবস্থানরত লাখো মুসল্লির সঙ্গে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ আদায় করেন স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, পুলিশের আইজি একেএম শহিদুল হক, অতিরিক্ত আইজিপি ড. জাভেদ পাটোয়ারী, জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ প্রমুখ।

বিশ্ব এজতেমার কর্মসূচি॥ বিশ্ব এজতেমার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ৬ উছুলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানো, নতুন জামাত তৈরি।
আখেরি মোনাজাত রবিবার সকালে ॥ বিশ্ব এজতেমার মারকাজের শুরা সদস্য মুরব্বি মো. মাহফুজ বলেন, প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের আরবী ও বাংলা ভাষায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন। মুসুল্লীদের ভোগান্তি কমাতে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম ॥ গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, জেলা প্রশাসন বিশ্ব এজতেমার সার্বিক কর্মকান্ড সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করে থাকে। ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিক নিদের্শনায় বিভিন্ন কার্যাদি তদারকি করে।

মুসুল্লিদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ॥ গাজীপুরের সিভিল সার্জন জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিকেল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করা হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারখানার গেট ও টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্যাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল মাঠসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে বেড বাড়ানো হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, অ্যাজমা, ট্রমা, বার্ন, চক্ষু এবং ওআরটি কর্ণারসহ কয়েকটি ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ চিকিৎসা দিচ্ছেন। এছাড়া মুসল্লিরা যাতে আশপাশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে রক্ত স ালন ব্যবস্থাসহ সব চিকিৎসাসেবা পান, তার জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালেও চিঠি দেয়া হয়েছে। অসুস্থ্য মুসল্লিদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকছে।

মাসলেহাল (সমস্যা সমাধান) জামাত ॥ এ জামাতের এক মুরুব্বী জানান, বিশ্ব এজতেমা ময়দানের মালখানায় এ জামাতের অবস্থান। এ জামা’তের সদস্যরা মুসল্লিদের যে কোনো ধরনের সমস্যা সমাধান করে থাকেন। বিশেষ করে কোনো মুসল্লি ময়দানে এসে গুরুতরভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে কিংবা মারা গেলে তাদের চিকিৎসাসেবা ও লাশ জানাজা শেষে নির্ধারিত ঠিকানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে থাকেন এ জামা’তের সদস্যরা। এখানে চিকিৎসক রয়েছেন। যারা মৃত্যুসনদও প্রদান করে থাকেন।

বিদেশি মুসুল্লির অংশগ্রহণ ॥ বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথমদিন বিশ্বের ৮৩ টি দেশের ৩ হাজার ৯৭৮জন বিদেশী মুসল্লি এজতেমায় অংশ নিয়েছেন বলে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে। বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে এজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে বিদেশী মেহমানদের জন্য ট্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানাগেছে।
এপর্বেও যৌতুকবিহীন বিয়ে হচ্ছে না ॥ বিশ^ এজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আছর এজতেমা ময়দানে কণের অনুপস্থিতিতে যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন করা হতো। গতবছরের মতো এবারের বিশ্ব এজতেমায় দ্বিতীয় পর্বেও ওই বিয়ের আয়োজন হচ্ছে না।

বিশ্বএজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, বিগত বছরগুলোতে বিশ্ব এজতেমা ময়দানে কণের অনুপস্থিতিতে বিয়ে অনুষ্ঠিত হতো। এবার তা হচ্ছে না। এজতেমা ময়দানে যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হলে তা কেবল এই ময়দানে আসা তাবলিগি সদস্যরা ও মুসুল্লীরা জানতে পারেন। এলাকার লোকজন এমনকি অনেক স্বজনরাও তা জানতে পারেন না। ফলে ওই বিয়ের আকর্ষণ কমে যায়। এজন্য গতবার থেকে এজতেমা ময়দানে যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
এজতেমা উপলক্ষে চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল ॥ এজতেমার মুসুল্লীদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দিতে এবারো সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগের প্রায় সব ক’টি জেলা থেকে শতাধিক চিকিৎসক এখানে আনা হয়েছে। এসব চিকিৎসকগণ দৈনিক তিন শিফটে (পালায়) এজতেমাস্থলে ডিউটি করবেন।

সাত স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ॥ এজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ ও র‌্যাব কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করেছে। সিসি ক্যামেরা মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা কন্ট্রেল রুম থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোশাকে আইনশৃংখলা বাহিনীল সদস্যরা অবস্থান করছেন। গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, পুলিশ ও র‌্যাবের প্রায় ১২ হাজার সদস্য ৭টি স্তরে বিভক্ত হয়ে পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়াও রয়েছে নৌ-টহল ও চেকপোষ্ট।

এজতেমার ইতিহাস ॥ এজতেমার মুরুব্বীদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে এজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। তারপর ১৯৪৮সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮সালে নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারীভাবে তুরাগ তীরের ১৬০একর জমি স্থায়ীভাবে এজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। মুসল্লীদের স্থান সংকূলান না হওয়ায় এবং নিরাপত্তার কথা ভেবে ২০১১ইং সাল থেকে দুই পর্বের এজতেমা শুরু হয়। একই কারনে ২০১৬ হতে হতে আবারও চার পর্বে দু’বছরে এজতেমা আয়োজনের পরিবর্তন আনা হয়। প্রথম বছর যারা (যে ৩২ জেলার মুসুল্লী) টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমায় অংশ নেবেন তারা পরবর্তী বছর সেখানে যাবেন না। ওই বছর এসব জেলার মুসুল্লীরা নিজ নিজ জেলায় আ লিক এজতেমায় শরিক হবেন। তবে বিদেশী মুসল্লীরা প্রতি বছর বিশ্ব এজতেমায় অংশ নিতে পারবে। ২০১৫সাল থেকে প্রতিবছর টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা পাশাপাশি জেলা জেলায় আ লিক এজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম, টঙ্গী থেকে