শ্রীলঙ্কার কোচের দায়িত্ব নিয়ে টানা দুই ম্যাচেই পরাজয় দেখলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সঙ্গী হলো হতাশা আর লজ্জা। জিম্বাবুয়ের পর সাবেক শিষ্যদের বিপক্ষে মান রক্ষার ম্যাচে ¯্রফে উড়ে গেছে তার দল। বাংলাদেশের ৩২০ রানে চাপা পড়ে ১৭.৪ ওভার বাকি থাকতে মাত্র ১৫৭ রানে লঙ্কানদের সবকটি উইকেটের পতন দেখলো মিরপুর শের-ই-বাংলার হাজারো দর্শক।শুক্রবার রেকর্ড গড়ে শ্রীলঙ্কাকে ১৬৩ রানে হারালো টাইগাররা। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে রানের হিসেবে এটি সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়। আগের সর্বোচ্চ ১৬০, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। দাপটের সঙ্গেই ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিল স্বাগতিক শিবির। দারুণ অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন সাকিব আল হাসান।হলো না। ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরে থাক, সামান্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়তে পারলো না শ্রীলঙ্কা। দাপুটে ক্রিকেটে অসহায় আত্মসমর্পণ করিয়ে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের লঙ্কা অধ্যায় আরও কঠিন করে তুললো বাংলাদেশ। টাইগারদের সামনে মাত্র ১৫৭ রানে অলআউট হয়ে লঙ্কানরা ম্যাচটি হেরেছে ১৬৩ রানে। যাতে বাংলাদেশ পেয়েছে ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়।

ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেছিলেন বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যান- তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। তাদের হাফসেঞ্চুরির ওপর ভর দিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ স্কোরে জমা করে ৩২০ রান। কঠিন সেই লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা হাথুরুসিংহের দল ৩২.২ ওভারে গুটিয়ে যায় ১৫৭ রানে। অসাধারণ থ্রোতে দিনেশ চান্ডিমালকে আউটের পর এলেন বোলিংয়ে, সেখানে সাকিব আল হাসান আরও দুর্দান্ত। জোড়া আঘাতে এই স্পিনার ফেরালেন অসেলা গুনারতেœ ও ভনিন্দু হাসারঙ্গাকে। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন সাকিব। ২৬তম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে দুই উইকেট তুলে নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে আরও চেপে ধরেন বাংলাদেশি অলরাউন্ডার। গুনারতেœকে আউট করে সাকিব পান ম্যাচের প্রথম উইকেট। ১৬ রান করা গুনারতেœকে ক্যাচ বানান তিনি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের হাতে। এখানেই থামলেন না তিনি, পরের বলেই আবার উইকেট। সাকিবের ঘূর্ণি বলটা বুঝতে পারেননি নতুন ব্যাটসম্যান হাসারঙ্গা। বল তার ব্যাটের উপরের দিতে লেগে ভাসতে থাকে বাতাসে, সহজ ক্যাচটা গ্ল্যাভসবন্দী করতে কোনও অসুবিধাই হয়নি মুশফিকুর রহিমের। বোলিংয়ে আসার ঠিক আগেই দুর্দান্ত এক থ্রোতে সাকিব রান আউট করেন চান্ডিমালকে। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার দিনে বেশ ভালোই খেলছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক রান আউটে ফিরতে হয় তাকে ২৮ রান করে।
চাপে পড়া দলকে আরও চাপে ফেলে গেলেন নিরোশান ডিকবেলা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ছিলেন না এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের চোটে একাদশে সুযোগ হয়ে যায় তার। যদিও সুযোগটা মোটেও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ১৬ রান করে বোল্ড হয়ে ফিরে গেছেন মোস্তাফিজের বলে।তার আগে জ্বলে উঠেছিলেন মাশরাফি। বোলিংয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট পেয়ে যান কুশল মেন্ডিসকে আউট করে। শুরু থেকেই ভুগতে থাকা লঙ্কান ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন ১৯ রান করে। তার ৩৪ বলের ইনিংসটি থামে মাশরাফির বলে রুবেল হোসেনের তালুবন্দী হয়ে।তিন হাফসেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে স্কোরে জমা করেছে ৩২০ রান। সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই শ্রীলঙ্কা হারায় কুশল পেরেরার উইকেটটি। স্পিন আক্রমণ দিয়ে বোলিং ইনিংস শুরু করা টাইগাররা তৃতীয় ওভারেই পায় সাফল্য। নাসির হোসেন নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান লঙ্কান ওপেনারকে। আউট হওয়ার আগে কুশল পেরেরা করেছেন মাত্র ১ রান।জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছিলেন কুশল পেরেরা। আফ্রিকার দেশটির বিপক্ষে ১২ রানে হারার ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছিল দলীয় সর্বোচ্চ ৮০ রানের ইনিংস। বাংলাদেশের বিপক্ষেও তার কাছ থেকে ভালো একটি ইনিংসের প্রত্যাশা ছিল লঙ্কানদের। কিন্তু হলো না, শুরুতেই আউট হয়ে চাপ বাড়িয়ে যান দলের।শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিল শ্রীলঙ্কা। অন্তত উপুল থারাঙ্গা বেশ ভালোভাবেই গুছিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। যদিও উইকেটে বেশি সময় তাকে থাকতে দিলেন না মাশরাফি। বাংলাদেশ অধিনায়কের শিকার হয়ে ফিরে গেছেন লঙ্কান ওপেনার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেননি থারাঙ্গা। ১১ রানে আউট হওয়া এই ওপেনারের বাংলাদেশের বিপক্ষে দায়িত্ব ছিল আরও বেশি। শুরুতে উইকেট হারানোর পর প্রাথমিক চাপটা ভালোভাবেই সামলে উঠেছিলেন তিনি। যদিও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। মাশরাফির বলে মাহমুদউল্লাহর হাতে ধরা পড়ার আগে করেন ২৫ রান।