টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন চলছেÑজেষ্ঠ্য মুরুব্বিদের বয়ানে ইসলামের আলম, আকিদা ও করণীয় বিষয়ে শুনছেন মুসল্লীরা। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। এদিকে, মাওলানা সা’দকে নিয়ে বিতর্ক ও তাবলীগ ইস্যুতে সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে ইজতেমা ময়দানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন মুফতি নজরুল ইসলাম।শনিবার ভোরে ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকে তাবলীগের জেষ্ঠ্য মুরুব্বীদের বয়ান শুনছেন ইজতেমায় অংশ নেওয়া কয়েক লাখ মুসল্লী। বয়ান থেকে ইসলামের আমল, আকীদা ও করণীয় বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করছেন মুসল্লীরা।দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় দেশের ১৬ জেলার কয়েক লাখ মুসল্লী ছাড়াও অর্ধশতাধিক দেশের কয়েক হাজার বিদেশি মুসল্লী অংশ নিয়েছেন।মুসল্লীরা বলেন, আখেরি মোনাজাতে দেশ ও মানুষের কল্যাণে প্রার্থনা করার কথা।
গাজীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, আখেরি মোনাজাত উপলক্ষ্যে নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়েছে। শনিবার রাত ১২টার পর থকে দিন ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রত থাকবে।এছাড়া আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে অতিরিক্ত ট্রেন ও বাসের ব্যবস্থা করা হবে। ইজতেমা থেকে কোরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা নিয়ে মুসলিম উম্মার পারলৌকিক মঙ্গলে ইসলামী দাওয়াতে বের হবেন মুসল্লীরা।বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত হবে রোববার। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার ৫৩তম আসর শেষ হবে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সোয়া ১১টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন রাজধানীর কাকরাইল জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের। বিশ্বের মুসলিম উম্মার সুখ, শান্তি, কল্যাণ, অগ্রগতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও মঙ্গল কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে চলতি বছরের ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা।বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব গত ১২ জানুয়ারি শুরু হয়। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ১৪ জানুয়ারি শেষ হয়। প্রথম ধাপে ইজতেমায় অংশ নেন দেশের ১৬ জেলার মুসল্লিরা। দ্বিতীয় পর্বেও ১৬ জেলার মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেছেন। মোনাজাতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ হাসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানসহ অনেকে অংশ নেবেন।গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ জানান, দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তায় প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে ৬ জন করে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন পুরো ইজতেমা ময়দানের জন্য আট স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আজ পর্যন্ত ৪৫টি দেশের প্রায় ৪ হাজার মুসল্লি যোগদান করেছেন।

আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শনিবার বাদ ফজরের পর টঙ্গীর তুরাগ তীরে শেষ পর্বের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ হোসেন। টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক চিত্তরঞ্জন দাস জানান, বার্ধক্য ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।তাদের মধ্যে শুক্রবার রাত সোয়া ১টার দিকে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার মোবারক হোসেন ওরফে মোহর আলী (৬৫) মারা যান। শনিবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ এলাকার ওমর আলীর ছেলে শহীদুল ইসলাম (৫৬) মারা গেছেন। প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা এক মালয়েশিয়ান ও আফ্রিকান নাগরিকসহ পাঁচ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছিল।গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ শনিবার সকালে টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে ইজতেমার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে এক ব্রিফিংয়ে জানান, আখেরি মোনাজাতের দিন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা-চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী ব্রিজ, কালীগঞ্জ-টঙ্গী সড়কের মাজুখান ব্রিজ থেকে স্টেশন রোড ওভারব্রিজ এবং কামারপাড়া ব্রিজ থেকে মন্নু টেক্সটাইল মিলগেট পর্যন্ত সড়কপথ বন্ধ থাকবে। তবে ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে মুসল্লিদের নিয়ে ইজতেমা ময়দানের দিকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ১৫টি শ্যাটল বাস চলাচল করবে। এছাড়া ১৯টি বিশেষ ট্রেনও চলাচল করবে। আন্তঃনগর ট্রেনগুলো টঙ্গী স্টেশনে দুই মিনিট করে যাত্রাবিরতি করবে।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাত ১২টা থেকে টঙ্গীর নিমতলী রেলক্রসিং, কামারপাড়া ব্রিজ ও ভোগড়া বাইপাস দিয়ে ইজতেমা ময়দানের দিকে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে বিকল্প হিসেবে ভোগড়া বাইপাস দিয়ে কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা হয়ে এবং বিপরীত দিকে ৩০০ ফুটের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে।এছাড়া ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত কামারপাড়া সেতু থেকে টঙ্গী সেতু পর্যন্ত তুরাগ নদীতে সব ধরনের নৌযান চলাচল ও নোঙ্গর বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে নৌযানসমূহ টঙ্গী সেতুর পূর্ব পাশে এবং কামারপাড়া ব্রিজের উত্তর পাশে নোঙ্গর করতে পারবে। নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও সদরঘাট থেকে ৬টি ওয়াটার বাস টঙ্গী পর্যন্ত মুসল্লি বহন করবে।২০১৯ সালে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ১১, ১২ ও ১৩ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব হবে ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইজতেমা মাঠের মুরব্বি প্রকৌশলী মাওলানা গিয়াস উদ্দিন। তবে এ তারিখ পরিবর্তনও হতে পারে।