শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, অপরাধী যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থানেবে।তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত সহকারী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী নাসিরকে কেন ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে আমি জানি না। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে এডমিনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা যদি অপরাধী হয় পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।শিক্ষামন্ত্রী সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

রোববার শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোতালেব হোসেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) উচ্চমান সহকারী মো. নাসির উদ্দিনকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব হোসেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশ রোববার জানায় ওই দুইজন তাদের হেফাজতে আছে।দুজনের নিখোঁজের খবরে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেও এখন আর ‘চিন্তা করার দরকার নেই মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, এটা এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপার।ব্যক্তিগত সহকারীর বিরুদ্ধে আগে কোনো ধরনের অভিযোগ পেয়েছেন কি-না জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, না, এর আগে তার বিরুদ্ধে আমি কোনো অভিযোগ পাইনি।তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরেছে বলে এখন তো আমরা শিওর হলাম। নিশ্চয় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। সেটা কোর্টে প্রমাণ হবে, তার শাস্তি হবে। সেই অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরেছে, নিশ্চয়ই কোনো অভিযোগ আছে। সে অভিযোগ কোর্টে প্রমাণ হবে এবং শাস্তি হবে। সেই বিধান অনুসারে আমাদের যে সিস্টেম আছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনী (ধরে) নিলে কিছু না কিছু কারণ আছে। দুর্নীতি হোক, অন্য যে কোনো ধরনের অপরাধ হতে পারে, অপরাধ আছে।

ওই দুইজনের মধ্যে মোতালেবকে শনিবার বিকালে বছিলা ও গুলশান থেকে কয়েকজন ব্যক্তি তুলে নিয়ে যায় বলে থানায় জিডি করেছিল পরিবার। আর নাসির বৃহস্পতিবার বনানী এলাকায় গিয়ে নিখোঁজ হন বলে তার পরিবার পুলিশকে জানিয়েছিল।তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করে রোববার রাতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মোতালেব ও নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।নাসিরের কাছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান। মোতালেব ও নাসিরের সঙ্গে লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিনকেও গ্রেপ্তার করার কথা রোববার স্বীকার করেছে পুলিশ। গত শনিবার বিকালে গুলশান এলাকা থেকে মতিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছিল তার পরিবার।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লেকহেড গ্রামার স্কুল খুলে দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ডে ফাইল চালাচালি করছিলেন শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব এবং উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন।

সোমবার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজার মন্ডপ ঘুরে দেখার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, পুলিশ ও ডিবি কাউকে ধরলে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই ধরে।আর শিক্ষামন্ত্রী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, যদি তারা কোনো ঘুষ নিয়ে থাকেৃ যে কোনো ধরনের অপরাধ করে থাকেন, ব্যবস্থা সরকার নেবে।ৃ আইনি ব্যবস্থায় যা আছে তাই হবে। আর সেই সঙ্গে এই অপরাধে অপরাধী হলে অবশ্যই আমাদের এখান থেকে চাকরিবিধি অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।পুলিশের হাতে আটক মোতালেব নিজের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হলেও এখন আর তাকে কোনো সহযোগিতা দেবেন না বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।তিনি বলেন, যা হওয়ার তাই হবে, আমরা এটা বরদাস্ত করব না। আমরা কোনোভাবেই বলব না যে আমার এখানে, মন্ত্রণালয়ে কাজ করে তাই তাকে আমরা সহযোগিতা দেব, মোটেই দেব না।আমরা কখনও কোনো অন্যায়কারী, কোনো ঘুষ খাওয়া, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, বেআইনি কাজ করা কোনো লোককে প্রশ্রয় দেব না, তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।আগে থেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরি করলেও দুই বছর আগে নাহিদের পিও হিসেবে বদলি হয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে আসেন মোতালেব।নাহিদ বলেন, এখানে (শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে) কারো জন্যই দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষ বা আইনবিরোধী কোনো কাজ করার কোনো সুযোগ, কোনো অধিকার নেই, তারপরেও হয়ত হয়।