বাংলাদেশে প্রায় ৮৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে সন্তুষ্ট।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)পরিচালিত এক জনমত জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।জরিপটি পরিচালনায় সহযোগিতা করেছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল (ইপিআরসি)।

সোমবার বিকালে বিদ্যুৎ ভবনে এক অনুষ্ঠানে এই জনমত জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ, ইপিআরসির চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ চৌধুরী, বিবিএস এর মহাপরিচালক আমীর হোসেন উপস্থিত ছিলেন।জরিপের ফলাফল সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর মধ্যে ৮৬ দশমিক ৯ ভাগ মানুষ সন্তুষ্ট এবং ১৩ দশমিক ১ ভাগ মানুষ সন্তুষ্ট নয়। ব্যবহারকারীদের মধ্যে ১১ দশমিক ২ ভাগ মানুষ খুব সন্তুষ্ট, সন্তুষ্ট মানুষের হার ৪৫ দশমিক ৮ ভাগ, আর মোটামুটি সন্তুষ্ট মানুষের হার ২৯ দশমিক ৯ ভাগ। সন্তুষ্টির এই হারের মধ্যে গ্রীষ্ম এবং শীতে মৌসুমে পার্থক্য রয়েছে।

বিবিএস এর প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রীষ্মকালে ৯ দশমিক ২ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সরবরাহে খুবই সন্তুষ্ট, ৪৭ দশমিক ২ ভাগ মানুষ সন্তুষ্ট, ৩১ ভাগ মানুষ মোটামুটি সন্তুষ্ট এবং ১২ দশমিক ৭ ভাগ অসন্তুষ্ট। আবার শীতে ১৩ দশমিক ৩ ভাগ মানুষ খুবই সন্তুষ্ট, ৪৪ দশমিক ৭ ভাগ সন্তুষ্ট, ২৮ দশমিক ৮ ভাগ মোটামুটি সন্তুষ্ট এবং ১৩ দশমিক ৫ ভাগ মানুষ অসন্তুষ্ট।খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৩ ভাগ জনগণ খুবই সন্তুষ্ট, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ দশমিক ৫ ভাগ মানুষ খুবই সন্তুষ্ট। ময়মনসিংহ বিভাগে সর্বোচ্চ ৫২ দশমিক ৭ ভাগ সন্তুষ্ট, বরিশাল বিভাগে সর্বনিম্ন ৩৪ দশমিক ৩ ভাগ মানুষ সন্তুষ্ট। চট্টগ্রামে বিভাগে সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৪ ভাগ মোটামুটি সন্তুষ্ট এবং খুলনা বিভাগে সর্বনিম্ন ১৯ দশমিক ৩ ভাগ মোটামুটি সন্তুষ্ট। মোটেও সন্তুষ্ট নয় এমন জনসংখার মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছে ১৭ দশমিক ৩ ভাগ এবং সর্বনিম্ন রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৯ ভাগ।

জরিপ পদ্ধতির বিষয়ে বলা হয়, ৬টি মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে ফোন করে জরিপের কাজ করা হয়।সর্বমোট ১৯ হাজার ৬০০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। শীত ও গ্রীষ্মকালে সন্তুষ্টির পার্থক্য আছে বলেও জরিপে বেরিয়ে এসেছে। সাশ্রয়ের জন্য সুইচ অফ করেন সর্বোচ্চ ৮০ দশমিক ১ ভাগ মানুষ, এরা খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। আর বিদ্যুৎ ব্যবহারের পর সুইচ অফ করেন না এমন মানুষের বেশিরভাগই বসবাস করেন সিলেটে। সিলেটের ৫৬ দশমিক ১ ভাগ মানুষই বিদ্যুৎ ব্যবহারের পর সুইচ অফ করতে ভুলে যান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে গিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই জনমত জরিপ করায় বিবিএস কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, জরিপের উদ্দেশ্য সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে জনগণ কী ভাবছে, তা জানা।গত নয় বছরে দেশের ৯০ ভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। আমরা যা বলি তার চেয়ে বড় কথা হল, মানুষ কী ভাবছে?

সরকারের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে নয় হাজার ২৫৪ মেগাওয়াটের ৮৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। তবে বর্তমানে সরকার বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দিকে নজর দিয়েছে। রূপপুরে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।তৌফিক ই ইলাহী বলেন, আমরা বিদ্যুৎ খাতে কী কাজ করছি, তার ফলাফল জানার জন্যই এ ধরনের জরিপ করা জরুরি। সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পন্থায় এই জরিপ করা হয়েছে।বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, এখন দেশে ক্যাপটিভসহ মোট উৎপাদিত বিদ্যুৎ এর পরিমাণ ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট। এর আগে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময়ে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ২০০৯ সালে ৪ হাজার ১৩০ মেগাওয়াট এবং গত বছর অক্টোবরে শুধুমাত্র গ্রিড সংযুক্ত কেন্দ্রে উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল ৫৫০ মেগাওয়াট, তখন প্রতিদিন উৎপাদন হতো ২২৪ মেগাওয়াট ।২০২১ সালের মধ্যে যুক্ত হবে হবে নয় হাজার মেগাওয়াট।এজন্য আগামী তিন বছর বিদ্যুৎ খাতে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে জানান তিনি।