ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)র অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজী (আইইউটি)র ভিসি’র অপসারণের দাবিতে মঙ্গলবার ক্লাশ বর্জন ও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা দিয়ে প্রধান ফটক তালা বন্ধ করে দেয়। আন্দোলনরতদের বাধার মুখে কাম্পাসে প্রবেশ করতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রায় ৫ ঘন্টা গেইটের বাইরে গাড়িতে অপেক্ষা করে ঢাকায় ফিরে যেতে বাধ্য হন।

আইইউটি’র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আব্দুল হামিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের বোর্ডবাজারস্থিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজী (আইইউটি)র শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্য মূলক আচরন, ছাত্রীদের হয়বরানী, পর্যাপ্ত ল্যাব ও হোস্টেলের সুবিধা না পাওয়াসহ বিভিন্ন দাবীতে ভিসি প্রফেসর ড. মুনাজ আহমেদ নুর- এর অপসারনের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারিরা সমন্বনিতভাবে মঙ্গলবার সকাল আটটা হতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা ‘সেভ আইউটি’ শ্লোগান লেখা ব্যানার নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এসে জড়ো হয়। পরে তারা ভেতর থেকে প্রধান ফটক বন্ধ করে তাতে তালা আটকে তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে ভিসির অপসারণ দাবি করে শ্লোগান দিতে থাকে। দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে ভিসি ড. মুনাজ আহমেদ নূর গাড়ি নিয়ে বিশ্ববিদালয়ের প্রধান ফটকে আসেন। এসময় তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে বিক্ষোভকারীরা বাধা দেয়। এসময় বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্র্ড হাতে ‘এক দফা এক দাবি মুনাজ তুই কবে যাবি‘সহ বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। এ সময় গেইটের আনসার সদস্যরা ভিসির গাড়ি ঘিরে রাখে। খবর পেয়ে দুপুর ১টার দিকে জয়দেবপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন। এসময় ভিসি মুনাজ আহমেদ আন্দোলনরতদের বুঝানোর চেষ্টা করে ব্যার্থ হন। আন্দেলনকারীরা তাদের দাবির পক্ষে অনড় থেকে বিক্ষোভ করতে থাকে। আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও বাধার মুখে কাম্পাসে প্রবেশ করতে না পেরে ভিসি মুনাজ আহমেদ বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত প্রায় ৫ ঘন্টা গেইটের বাইরে গাড়িতে অপেক্ষা করে অবশেষে তিনি ঢাকায় ফিরে যেতে বাধ্য হন।

আইইউটির সহকারি ল্যাব ইন্সট্রাক্টর মো. গোলাম মোস্তফা জানান, ভিসি ড. মুনাজ আহমেদ নূর আইইউটিতে যোগদানের পর থেকে বিনা কারণে অনেক কর্মচারীকে ছাটাই করেছেন। কাউকে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যহতি দেয়ার চাপ সৃষ্টি করছেন। এছাড়া প্রশাসনিক বিধির অপব্যবহার করে একটি বৈষম্যমূলক কর্মক্ষেত্রের তৈরি করেছে। যা কার্যক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। বেতনভাতা বৃদ্ধি, অস্থায়ী পদকে স্থায়ীকরণ, পদ বাড়ানোসহ নানা দাবিতে আন্দোলন করলেও তিনি আমলে নিচ্ছেন না।

তারা জানায়, তিনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে নানা সময়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। ক্লাস সুবিধা না বাড়িয়ে তিনি অধিকহারে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন, তাছাড়া তিনি দীর্ঘ দিন ধরে কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন ভাতাও বাড়াচ্ছেন না। ২০২০ সালের আগে বেতন ভাতা বাড়াবেন না বলে কর্মকর্তা কর্মচারিদের জানিয়ে দেন। আইইউটিতে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে এডহক ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন। এতে আইইউটির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। এসব ঘটনায় ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারিরা বিক্ষোব্ধ হয়ে ওঠে। এ ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারিরা ওআইসির মহাসচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আইইউটির ইলেক্ট্রক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. তাসলিম রেজা সহকারি জানান, আমরা শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিসির অসৌজন্যমূলক আচরন ছাড়াও কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু ওইসব সমস্যার সমাধান হয়নি। তারপর গত নবেম্বর ওআইসির মহাসচিবের কাছে ওইসব সমস্যার কথা জানিয়েছে। পরে সেখান থেকে তিনসদস্যের একটি টিম আইইউটিতে আসেন এবং ভিসির সঙ্গে কথা বললেও তিনি পদত্যাগ করেন নি। ভিসি মুনাজ আহমেদ এর অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যহত থাকবে।

এ ব্যপারে আইউটি’র ভিসি মুনাজ আহমেদ নুর বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের মদদে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করতেই কিছু সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থীরা আমার বিরুদ্ধে এ ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে তাদের আনা কোন অভিযোগ সঠিক নয় এবং সবগুলোই ভিত্তিহীন। আমার সময়েই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় আইইউটিতে ছাত্রীভর্তি ও তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা তাদের সহ্য হয়নি। সম্প্রতি আওয়ামীলীগের উপ-কমিটিতে আমার নাম যুক্ত হওয়ায় বিষয়টি অনেকের পছন্দ হয়নি। কারো সঙ্গে আমার অসৌজন্যমূলক কোন আচরন, দূর্ব্যবহার কিংবা ছাত্রী হয়রানীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোহাম্মাদু ওমারু’র নেতৃত্বে ওআইসি’র একটি প্রতিনিধি দল আইউটি’তে এসে গত ১৭ হতে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তদন্ত করে গেছেন। তাদের তদন্ত রিপোর্ট এখনো প্রকাশ হয়নি। তদন্ত দলকে প্রভাবন্বিত করতে তারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমি কিছু বিষয় নিয়ে একাধিকবার তাদেরকে বসতে বলেছি, তাদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের কোন যুক্তিপূর্ণ দাবি না থাকায় তারা বসেনি। তাদের উদ্দেশ্য একটাই যেন আমি এ প্রতিষ্ঠানে না থাকি।