পাবনার সাঁথিয়ার পল্লীতে স্ত্রীর পরকীয়ার কারনে স্বামীর ভাড়টিয়া খুনিদের হাতে খুন হয়েছে প্রেমিক যুবক। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় হত্যার পরিকল্পনাকারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে, রাজিব, শামীম ও ফখরুল। এরা একই উপজেলার বাসিন্দা। গ্রেপ্তারকৃতরা এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এছাড়াও ঘটনার সাথে জড়িত আরো ৩/৪ জনকে পুলিশ খুঁজছে।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় পাবনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম। লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম জানান, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার রায়া গ্রামের মমতাজ আলী গত ৪/১২/২০১৭ তারিখে আবু সাঈদ নামের একজন নিখোঁজ হয়েছেন দাবী করে সাঁথিয়া থানায় একটি জিডি করেন। জিডি নং ১৪১। ওই জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, আবু সাঈদ ৩০/১০/২০১৭ ইং তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে জেলার বেড়া সিএন্ডবি বাজারে কাঁঠাল কেনার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি।

তিনি বলেন, জিডির পর হেড কোয়ার্টারের সহায়তা নিয়ে পুলিশ মাঠে নামে অনুসন্ধানে। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে পুলিশ ওই উপজেলার রায়া গ্রামের মোস্তফার ছেলে রাজিবকে (২৪) গ্রেপ্তার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রাজিব জানায়, ফখরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি মাদক মামলায় জেলে যায়। জেলে থাকার সুযোগে ফখরুলের স্ত্রী ইবরিয়া খাতুন আবু সাঈদ নামের এক যুবকের সাথে পরকীয়া সর্ম্পক গড়ে তোলে। ইবরিয়ার স্বামী ফখরুল জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ঘটনা জানার পর আবু সাঈদকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই এক পর্যায়ে ফখরুল, রাজিব ও শামীমসহ তাদের সহযোগীদের সাথে ২ লাখ টাকা শর্তে আবু সাঈদকে হত্যার চুক্তি করে। চুক্তি মোতাবেক রাজিব ৩০/১০/২০১৭ তারিখে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আবু সাঈদকে ডেকে নিয়ে যায় স্থানীয় রফিকুল ইসলামের ইউক্যালিপটাস বাগানে। গ্রেফতারকৃতরাসহ অন্যান্য হত্যাকারী আগেই ওই বাগানে অবস্থান করছিল। আসামীরা ওই বাগানে ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন করে। রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে আসামী শামীমের নেতৃত্বে অন্য সহযোগীদের সহযোগিতায় আবু সাঈদের গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে পা বেঁধে হত্যা করে। হত্যার পর ফখরুলকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হত্যার কথা নিশ্চিত করে হত্যাকারীরা। আসামী রাজিব পুলিশের কাছে আরও জানায়, মোবাইল ফোনে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করার পরও ফখরুল বিশ্বাস না করায় লাশের মাথা ফখরুলের বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য আসামীরা প্রস্তাব দেয়। পরে আবু সাঈদের মাথা কেটে ফখরুলের বাড়ীতে নিয়ে যেতে বলে। তখন আসামীরা আবু সাঈদের মাথা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফখরুলের বাড়িতে নিয়ে যায়। মাথা দেখার পর ফখরুল বিশ্বাস করে সত্যি আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়েছে। ২ দিন পর চুক্তির টাকা আনার জন্য ফখরুলের বাড়িতে যায় রাজিবসহ হত্যাকারীরা। এ সময় ফখরুল তাদের ১৯ হাজার টাকা দিয়ে পরে দেবে বলে বিদায় করে দেয়। অবশিষ্ট টাকার জন্য ফখরুলের কাছে চাপ দিতে থাকে হত্যাকারীরা। সুচতুর ফখরুল হত্যাকারীদের জানায়, রাতের আঁধারে কার মাথা দেখিয়েছিস, বুঝতে পারিনি। আবার মাথা দেখাতে হবে। ঘটনার ৩/৪ দিন পর মাটির নীচ থেকে মাথা তুলে ফখরুলের বাড়িতে যায় রাজিবসহ অন্যরা। কিন্তু সুচতুর ফখরুল হত্যাকারী রাজিবসহ অন্যদের আর কোন টাকা না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি দেখাতে থাকে।

বেড়া-সাথিয়া সার্কেলের এএসপি মিয়া মোহাম্মদ আশিষ বিন হাসান জানান, জিডির ঘটনাটি তদন্তের অনুমতি পেয়েই তথ্যানুসন্ধান শুরু করি। এরই এক পর্যায়ে নিখোঁজের ঘটনাটি হত্যাকান্ড এমন ক্লু পেয়ে এবং সংশ্লিষ্টদের মোবাইল কল লিষ্ট পর্যালোচনা করেই রাজিবকে গ্রেপ্তার করি। রাজিবের স্বীকারোক্তি ও অন্যান্য তথ্যসূত্রের আলোকেই মাষ্টারমাইন্ড রাজিব, শামীম ও ফখরুল কে গ্রেপ্তার করা হয় বলে তিনি জানান। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৯ টার দিকে আবু সাঈদের মাথা ফখরুলের বাড়ির পেছনের একটি পঁচা ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম বলেন, শুধু গ্রেপ্তার নয়, মামলার আরও ক্লু উদ্ধারে পুলিশ কাজ করছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে কিছু বিষয় গোপন রেখে তদন্ত কাজ চলছে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে সোর্পদ করা হবে। একই সাথে এ ঘটনার সাথে আরও কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের ধারণা, গ্রেপ্তারকৃতরা পেশাদার কিলার নয়। তারা মাদক সেবনকারী। মাদকের টাকা জোগাড় করতেই এই হত্যাকান্ডের সাথে তারা সম্পৃক্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস, পাবনা প্রেসক্লাব সম্পাদক আঁখিনুর ইসলাম রেমনসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার কর্মিরা উপস্থিত ছিলেন।