গত ১০ বছরে ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে যাদের, তাদের কাছ থেকে ৬৫ হাজার ৬০২ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভবপর হয়নি।বুধবার সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এই ঋণ খেলাপির তালিকায় আছে ১ হাজার ৯৫৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।যে ১০ বছরের খেলাপি ঋণের হিসাব অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন, তার নয় বছরই ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। খেলাপি ঋণের এই অর্থ দিয়ে দুটি পদ্মা সেতুর ব্যয় মেটানো সম্ভব।স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকাও প্রকাশ করেছেন। খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা হিসেবে মুহিতও স্বীকার করছেন। খেলাপি ঋণের হার দুই অঙ্কের কোঠা অতিক্রম করে যাওয়ায় অর্থনীতি বিশ্লেষকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন।

অর্থমন্ত্রী মুহিত সংসদে বলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণতথ্যের ভিত্তিতে বিগত ১০ বছরে ১০ কোটি টাকার অধিক ঋণ নিয়েছে ৮ হাজার ৭৯১ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।এসব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়েছে ৬ লাখ ৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ৬০২ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ৭২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া ৯১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঋণের পরিমাণ, ঋণ গ্রহীতা ৮ হাজার ৭৯১টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঋণ আদায় করা সম্ভব হয়নি এমন ১ হাজার ৯৫৬ জন খেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামও উল্লেখ করেন। খেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকায় প্রথম ২০টির মধ্যে রয়েছে, মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স, মেরিন ভেজিটেবল অয়েল, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস, বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আনোয়ারা স্পিনিং মিলস, চৌধুরী নিটওয়ারস, সিদ্দিক ট্রেডার্স, ইয়াসির এন্টার প্রাইজ, আলাপ্পা কম্পোজিট টাওয়ালস, লিজেন্ড হোল্ডিংস, হলমার্ক ফ্যাশন্স, মুন্নু ফেব্রিক্স, ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল, ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স, শাহারিশ কম্পোজিট টাওয়ালস, কেয়া ইয়ার্ন মিলস, সালেহ কার্পেট মিলস, ফেয়ার ইয়ার্ন প্রোসেসিং, হেল্পিং রিসোর্স, বিসমিল্লাহ টাওয়ালস।

সংসদে আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, দেশে এখন করদাতার সংখ্যা ৩১ লাখ।তিনি একই সঙ্গে বলেন, এটা দেশের জন্য লজ্জাজনক। কারণ ১৬ কোটি মানুষের দেশে করদাতার সংখ্যা হওয়া উচিত ১ কোটি ৬০ লাখ।২০২১ সালের মধ্যে করদাতার সংখ্যা ৫০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্যের কথাও জানান অর্থমন্ত্রী।এদিকে, দেশের দারিদ্র্য দূর করতে আরো একবার শেখ হাসিনার সরকারের ক্ষমতায় থাকা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে তৈরি পোশাক শিল্প পণ্যের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। রাজধানীতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) চার দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এখনো দেশের তিন কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। বর্তমান সরকার সর্বান্তকরণে এ বিষয়ে কাজ করছে। বলতে গেলে সর্বশক্তি নিয়োগ করে গুরুত্ব দিয়েছে। তাই অনেকটা রাজনৈতিক হলেও আমি বলতে চাই, বর্তমান সরকারকে আরো এক টার্ম ক্ষমতায় থাকা দরকার। মুহিত বলেন, এটা রাজনৈতিক কথা। কিন্তু অনেক সময়ই রাজনীতিকে এড়ানো যায় না। অর্থনীতিতে তো রাজনীতি বা রাজনৈতিক দর্শন থাকতেই হয়। গত নয় বছরে আমরা দেশের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১০ ভাগ কমিয়েছি। আরো এক টার্ম বর্তমান সরকার দেশ চালানোর ক্ষমতা পেলে আরো দশ ভাগ দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমবে। তিনি বলেন, তাহলে ২০২৪ সালে গিয়ে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা থাকবে মাত্র চার ভাগ। এটুকু থাকবেই। পৃথিবীর সব দেশেই এটা থাকে। কারণ রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল মানুষ সব সময়ই, সব দেশে থাকে।এদের অনেকেই শারীরিকও মানসিক প্রতিবন্ধীসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্ত থাকেন।গার্মেন্টেক-২০১৮ উদ্বোধন করতে গিয়ে মুহিত আরো বলেন, গার্মেন্টস শিল্পকে আমরা দেশের মেইনস্ট্রিম শিল্প বলে থাকি। কিন্তু তারা একা কিছুই না। এর সঙ্গে আরো অনেক সেক্টর জড়িত। দেশের রফতানির বড় খাত হিসেবে সরকার সব সময়ই এই খাতকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও এই সেক্টরের পাশে থাকবে সরকার।অনুষ্ঠানে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গার্মেন্ট সেক্টর সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কর পলিসি সব সময়ই এই শিল্পকে ভুগিয়ে থাকে। এই অবস্থা কাটানোর জন্য সরকারের ৫ বছরের জন্য কর পলিসি নির্ধারণ করা দরকার। এতে ব্যবসায়ীরা সে অনুযায়ী ব্যবসার পরিকল্পনা করতে পারবেন।