দেশের অচল নৌরুটগুলো চালুর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসব নৌরুট যতবেশি চালু ও কার্যকর হবেÑ সস্তায় ততো বেশি পণ্য সরবরাহ করা যাবে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে ‘যমুনা-পদ্মা নদীর তীর স্থিরকরণ এবং ভূমি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ উন্নয়নে প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পের রূপরেখা উপস্থাপন’ অনুষ্ঠানে একথা বলেন। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়াতে নদ-নদীর গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এজন্য নদীগুলোতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের ওপর জোর দেন তিনি ।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহু বছর হয়ে গেছে আমাদের নদীগুলো ড্রেজিং করা হয়নি। সেজন্য আমরা বারবার বলছি প্রথমে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য এবং প্রতি বছরই সেগুলোর মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং করতে হবে।এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগ ও চাষের জমি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। নদ-নদী রক্ষা, ব্যবস্থাপনা ও যথাযথ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, নদী খনন ও নদীতীর সংলগ্ন ভূমি পুনরুদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

নদীর নাব্যতা বাড়াতে খননের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, নদীর গভীরতা বাড়িয়ে এবং প্রশস্ততা কমিয়ে ভূমি পুনরুদ্ধার করে সেখানে ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠির জন্য নতুন বসতি ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।পুনরুদ্ধারকৃত জমিতে পরিকল্পিত শিল্প কারখানা স্থাপন এবং নগরায়নের লক্ষ্যে বিনিয়োগ করলে তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।যমুনা-পদ্মা নদীর তীর স্থিতকরণ এবং ভূমি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ উন্নয়নে প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পে’ বিভিন্নস্থানে ২২০ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ কথা বলা হয়েছে।এছাড়া নদী খননসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং নদীপথ সংরক্ষণের মাধ্যমে গড়ে ১৬ কিলোমিটার প্রশস্ততাকে ৭ থেকে ৮ কিলোমিটারে নামিয়ে এনে প্রায় ১৬০০ বর্গকিলোমিটার ভূমি পুনরুদ্ধার ও ৩৫০ কিলোমিটার নৌপথ সংরক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ধাপে ধাপে ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫ বছরে (২০১৫-২০৪০) বাস্তবায়িত হবে।বিভিন্ন কারণে পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, নদীতে পলি জমে নাব্য হ্রাস পাওয়া এবং নদী ভাঙ্গনের ফলে সৃষ্ট সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সব সমস্যার ফলে নদীর ¯্রােত এবং ধারণক্ষমতা কমে যায়।তিনি নদী খননের সময় আশপাশে বাফার জোন তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, “কোনো নদীর এক জায়াগায় ড্রেজিং করে পলি নিকটস্থ জায়গাতে ফেলে রাখা যাবে না। বরং বাফার জোনে সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে তা অন্য কাজে ব্যবহার করতে হবে।বাফার জোনে বর্ষা মৌসুমে পানি আসার সুযোগ রাখতে হবে। সেখানে সংরক্ষণ করা পানি শীতকালে বিভিন্ন কাজে বিশেষ করে চাষবাসে ব্যবহারের মাধ্যমে পল্লীর দারিদ্র্য দূর করতে সহায়তা করতে পারে।নদী সংরক্ষণে যথাযথ গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড্রেজিং করে নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌপথ ঠিক রাখতে পারলে সস্তায় পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে। শেখ হাসিনা নদী ভাঙ্গন রোধে ব্লক ফেলার দিকে কারো কারো উৎসাহের সমালোচনা করে বলেন, ব্লক ফেলায় তাদের যত আন্তরিকতা, ভাঙ্গন রোধে চরে গাছ লাগানোতে ততটা নেই।তিনি বলেন, নদী পাড় সংলগ্ন চরের মাটি কেটে সেখানে দ্রুত বর্ধনশীল গাছ লাগিয়ে নদী ভাঙ্গন রোধ করতে হবে।পানি সম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।