মুখে দাবির কথা থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করাই আন্দোলনকারীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলা এবং প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় বিচারের দাবিতে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘তাদের আন্দোলনের বিষয় ছিল একটি। কিন্তু তাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল অন্য। দাবি ছিল তাদের মুখে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মাঠে আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যে কোনো মূল্যে শান্ত করার জন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আছে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি জানায় সংগ্রাম পরিষদ। এ ছাড়া ৩১ জানুয়ারি ছাত্র সমাবেশ, ৬ ফেব্র“য়ারি মানববন্ধন এবং ৭ ফেব্র“য়ারি মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।ছাত্রলীগের বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা’ ও প্রশাসনিক ভবনে ‘ভাঙচুরের’ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রমৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল), বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্র সমিতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বাসদ), জাতীয় ছাত্রঐক্য ও জাতীয় ছাত্র কেন্দ্রের জোট এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এই সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। আগের দিন ছাত্রলীগের দপ্তর থেকেই এ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম বলেন, ‘২৩ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অপ্রীতিকর ও ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যায়, কতিপয় ছাত্রসংগঠনের নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তাঁর সঙ্গে অসদাচরণ করা হয় এবং তাঁকে লাঞ্ছিত করে। এ খবর শিক্ষার্থীদের কানে পৌঁছালে তারা উপাচার্যকে উদ্ধার করে। যার ফলে আন্দোলনরত কতিপয় ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা করে এবং ছাত্রী বোনদের ওপর নির্যাতন চালায়।সামছুল ইসলাম বলেন, গত ১০০ বছরের ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাঁরা ওই দিনের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশের দাবি করেন। অন্য দাবিগুলো হলো সব ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা ও দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে সে জন্য পরিবেশ পরিষদ চালু করা, অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা ও সব প্রক্রিয়া শুরু করা এবং অধিভুক্ত সাত কলেজ নিয়ে বিরাজমান সমস্যার দ্রুত সমাধান করা।এসব দাবিতে ৩১ জানুয়ারি অপরাজেয় বাংলার সামনে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রসমাবেশ, ৬ ফেব্র“য়ারি রাজু ভাস্কর্যের সামনে সন্ত্রাসবিরোধী মানববন্ধন ও ৭ ফেব্র“য়ারি উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।২০১৬ সালের ১ জুলাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের গাড়িতে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সামছুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা ছিলেন। আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান বলেন, কিছুদিন ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলন চলছে, যার পেছনে ছিল অনেক ষড়যন্ত্র। এতে ছিল শিবির, ছাত্রদল ও নিষিদ্ধ সংগঠনের অংশগ্রহণ।এই সংবাদ সম্মেলনের আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন হয়। সেটিও ছাত্রলীগের আমন্ত্রণে অনুষ্ঠিত হয়।