এবছর অমর একুশে বই মেলার পরিসরের সঙ্গে আধা ঘণ্টা সময়ও বাড়িয়েছে বাংলা একাডেমি।মঙ্গলবার একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বই মেলার দুয়ার।একাডেমির মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা যথারীতি আগামী ১ ফেব্র“য়ারি শুরু হবে। মেলা চলবে ২৮ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত। ওই দিন বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে এই মেলার উদ্বোধন করবেন।একই সঙ্গে তিনি মেলার ওয়াই-ফাই সংযোগ ও ওয়েবসাইট উদ্বোধন করবেন। আর ছুটির দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্র“য়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া হবে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে মেলার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও মেলার পরিচালক জালাল আহমেদ। মেলা হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় পাঁচ লাখ বর্গফুট জায়গায়। এজন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১২টি চত্বরে বিন্যস্ত করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জানান, এবার বই মেলায় বাংলা একাডেমি চত্বরকে সদ্যপ্রয়াত কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে।

এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১২টি চত্বরের মধ্যে থাকবে শহীদ আলতাফ মাহমুদ চত্বর, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক চত্বর, অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ চত্বর, শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেন চত্বর, শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহ চত্বর, শহীদ নূর হোসেন চত্বর, শহীদ মুনীর চৌধুরী চত্বর, শহীদ আসাদ চত্বর, শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা চত্বর, লোকশিল্পী রমেশ শীল চত্বর, ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক আবদুল হাই চত্বর। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩৬টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৮৩টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মোট ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার ১৩৬টি লিটল ম্যাগাজিনকে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির একটি প্যাভিলিয়ন, চার ইউনিটের দুইটি, একাডেমির শিশু-কিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য একটি এবং একাডেমির সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার-এর একটি স্টল থাকবে।ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। মেলায় বাংলা একাডেমি এবং অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে। শিশু চত্বরেও স্টলের সংখ্যা বেড়েছে। ইট বিছিয়ে শিশু চত্বরকে উন্নত করা হয়েছে। এবারও শিশু চত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। এই কর্ণারকে শিশু-কিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। মাসব্যাপী মেলায় এবারও প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ ঘোষণা করা হয়েছে।

এবারও মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। উভয় অংশে বাংলা একাডেমি পরিসরের নতুন বইয়ের প্রদর্শশালা করা হয়েছে। এতে প্রতিদিন প্রকাশিত নতুন বই দিনভিত্তিক সাজানো থাকবে।প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে উদ্যান ও একাডেমি উভয় অংশের স্টলগুলোতে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পর্যাপ্ত মাটি ফেলে জমি ভরাট করা হয়েছে।

বই মেলার দুটি মূল প্রবেশপথ থাকবে টিএসসি, দোয়েল চত্বর এলাকায়।বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বের হওয়ার ছয়টি পথ থাকবে।বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন থাকবে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। নিñিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলাজুড়ে আড়াইশ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।সমগ্র মেলা প্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহিদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও আশপাশের স্থানকে নান্দনিকভাবে মেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, যাতে স্বাধীনতা স্তম্ভের আলোক-বিচ্ছুরণে মেলা প্রাঙ্গণ আলোকিত হয়। ২০১৭ সালে প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।এছাড়া ২০১৭ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। মেলা উপলক্ষে ২২-২৩ ফেব্র“য়ারি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ফ্রান্স, স্পেন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ আটটি দেশের ১৫ জন কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবী অংশ নেবেন।এছাড়া ২ থেকে ২৮ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৪টায় মেলার মূল মে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার।