সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে খসড়া অনুমোদন করেছে, তাতে সংবাদপত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি।দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বাকশালী কায়দায় অতীতে যেভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছিল, আজও এ আইনের মাধ্যমে তা করা হচ্ছে।কারণ সরকার অলিখিতভাবে বাকশালের পথেই হাঁটছে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যহোসেন বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হবে।সরকার অলিখিতভাবে বাকশালের পথেই হাঁটছে।

মঙ্গলবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রস্তাবিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’-এর খসড়ার বিষয়ে এ মন্তব্য করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।মোশাররফ হোসেন বলেন, বাকশালী কায়দায় অতীতে যেভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছিল, আজও এ আইনের মাধ্যমে তা করা হচ্ছে। কারণ সরকার অলিখিতভাবে বাকশালের পথেই হাঁটছে। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার চেয়েও ভয়ংকর। কেননা যে যে কাজের কারণে ৫৭ ধারায় অভিযুক্ত করা যেত, সেসব কাজকে এই আইনে সম্প্রসারিত করা হয়েছে।খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা মনে করি, এটি বাকশালের ধ্যানধারণায় সংবাদপত্র এবং মুক্তমনের ব্যক্তিদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য এটি করা হয়েছে। আমরা মন্ত্রিসভায় এই আইনের খসড়া অনুমোদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

খালেদা জিয়ার রায়ের বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, খালেদা জিয়াকে যদি অন‌্যায়ভাবে কোনো রায় চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে এ দেশের জনগণের সেন্টিমেন্টের ওপর রায় দেওয়া হবে। খালেদা জিয়ার প্রতি এ দেশের জনগণের যে সমর্থন, সে সমর্থনের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হবে। খালেদা জিয়া যে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন, সেই গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হবে।খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন‌্যায়ভাবে রায় দেওয়া হলে জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হবে।বিএনপির এই নেতা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে বাইরে রেখে নেতা-কর্মীদের জেলে রেখে এই দেশের জনগণ আবার ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন হতে দেবে না। ৮ ফেব্রুয়ারির ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের রাজনীতি, আগামী দিনের নির্বাচন। খালেদা জিয়াকে ছাড়া, বিএনপিকে ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না।খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেণ, আমরা মনে করি, এটি বাকশালের ধ্যান-ধারণায় সংবাদপত্র এবং মুক্তমনের ব্যক্তিদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য করা হয়েছে। আমরা মন্ত্রিসভায় এই আইনের খসড়া অনুমোদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।সমালোচিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা তথ্য প্রযুক্তি আইন থেকে সরিয়ে সেগুলো আরও বিশদ আকারে যুক্ত করে সোমবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নেরপ প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।এ আইন পাস হলে হ্যাকিং; ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’; রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বা ভয়ভীতি সৃষ্টির জন্য কম্পিউটার বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং ডিজিটাল উপায়ে গুপ্তচরবৃত্তির মত অপরাধে ১৪ বছরের কারাদাণ্ডের পাশাপাশি কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।এদিকে, মঙ্গলবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কথা বলেন।তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ‘একটি কালো আইন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।এটি পাস হলে মানুষের বাক স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলেও কিছুই থাকবে না। সরকারের দুর্নীতি যাতে প্রকাশ না পায় বা কেউ প্রকাশ করতে না পারে সেজন্য এই আইন করা হয়েছে। ৫৭ ধারার মত এ আইনেও সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হবেন।রিজভীর ভাষায়, প্রস্তাবিত ওই আইনে বাক স্বাধীনতাকে অপরাধে পরিণত করা হয়েছে।গণতন্ত্রকামীরাই ক্রিমিনাল হিসেবে চিহ্নিত হবে এই আইনে। ফিরে যাওয়া হবে মধ্যযুগের অন্ধকারে। আমরা এই আইন সংসদে পাস করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, তাইফুল ইসলাম টিপু ও মুনির হোসেন এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।