কোনো সাংবাদিক গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে তা যদি সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলেই মনে করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। মন্ত্রিসভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদনের পর মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তার এই মন্তব্য আসে।তোফায়েল বলেন, আপনি যদি একটা সত্য রিপোর্ট প্রকাশ করেন, এটাতে বোঝা যাবে এটা সত্য না মিথ্যা, তাহলে তার ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমি মনে করি না, ইফ দ্য রিপোর্ট ইজ কারেক্ট।সমালোচিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা তথ্য প্রযুক্তি আইন থেকে সরিয়ে সেগুলো আরও বিশদ আকারে যুক্ত করে সোমবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।এ আইন পাস হলে হ্যাকিং; ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’; রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বা ভয়ভীতি সৃষ্টির জন্য কম্পিউটার বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং ডিজিটাল উপায়ে গুপ্তচরবৃত্তির মত অপরাধে ১৪ বছরের কারাদা-ের পাশাপাশি কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদ- বা উভয় দ- দেওয়া যাবে।আর ইন্টারনেটে কোনো প্রচার বা প্রকাশের মাধ্যমে ‘ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত’ করার শাস্তি হবে ১০ বছরের জেল, ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড।

তোফায়েল দাবি করেন, বিএনপি সরকারের সময় প্রণীত আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাকে নতুন আইনে স্পষ্ট করা হয়েছে। ‘সঠিকভাবে, স্বচ্ছতার সঙ্গেই’ এটা করা হয়েছে।সরকারি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল উপায়ে ধারণ, স্থানান্তর বা সংরক্ষণ করা এবং তাতে সহয়তাকে গুপ্তচারবৃত্তির অপরাধ হিসেবে গণ্য করে ১৪ বছরের কারাদ- বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।ফলে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মতই এ আইন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পত্রপত্রিকায় একেকজন এমপির নামে চরিত্র উদঘাটন করে সে কোথায় গিয়েছে, কি করছেৃ যেভাবে ছবি-টবি দিয়ে সাজানো হচ্ছে, কম তো হচ্ছে না। নির্বাচিত প্রতিনিধি, তারাও তো মর্যাদাশীল, যেভাবে লেখা হয়ৃ।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অনেকে তথ্য সরবারহ করার চেষ্টা করে, যেগুলো সঠিক নয়। আবার দলের মধ্যেও আছেৃ আমি নোমিনেশন চাই, তাকে ছোট করি, এভাবেও তথ্য দেয়।প্রস্তাবিত আইন নিয়ে উদ্বেগের কথা জানানো হলে তোফায়েল বলেন, আপনারা আপনাদের মত লিখে যান, কিন্তু সঠিকভাবে লেখেন। ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করেনি, আপনারা যদি লেখেন যে ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করেছে, আর (ব্যবসায়ীরা) দাম যদি বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমরা কী করব? দুর্নীতির তথ্য অনুসন্ধানে গেলে প্রস্তাবিত আইনে সেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হতে পারে- এক সাংবাদিকের এমন শঙ্কার পর মন্ত্রী বলেন, গোপনে করবেন কেন? আমার এখানে আইসেন, আপনারা কোনটা জানতে চান আমি দেখিয়ে দেব। আমরা এই আইন করেও আপনাদেরকে থামাতে পারব বলে আমার মনে হয় না।