বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে হাইকোর্টের সামনে মঙ্গলবার প্রিজন ভ্যান ও পুলিশের ওপর হামলা বিএনপির নয়Ñঅনুপ্রবেশকারীরা এ হামলার সঙ্গে জড়িত দাবি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

হামলার ঘটনার পরদিন বুধবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন দাবি করেন।তিনি বলেন, গতকাল যে ঘটনাটা ঘটেছে হাই কোর্টের সামনে, যা ইতোমধ্যে পত্র-পত্রিকায় সব জায়গায় এসেছে। আমরা নিজেরাই ছেলেদের চিনতে পারছি না! টু বি ভেরি ফ্র্যাংক, আমরা আশঙ্কা করছি, অনুপ্রবেশকারীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে।আর এর পেছনে সরকারের হাত থাকতে পারে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। আমরা যে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছি, শান্তিপূর্ণভাবে যে রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনার চেষ্টা করছি, সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটাকে বিনষ্ট করবার জন্য কাজ করছে।বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায়ের তারিখ সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারির মধ্যেই মঙ্গলবার বিকালে পুলিশের ওপর হামলার ওই ঘটনা ঘটে।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় হাজিরা দিয়ে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় ফেরার পথে হাই কোর্ট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপিকর্মীরা। তাদের বেধড়ক পিটুনির শিকার হন কয়েকজন পুলিশ সদস্য, ভাংচুর হয় তাদের গাড়ি ও আগ্নেয়াস্ত্র।প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে বিএনপিকর্মীরা পুলিশের হাতে আটক দুই নেতাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ করেন ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার।ঘটনাস্থল থেকে ৬৯ জনকে গ্রেপ্তারের পর রাতে এনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে কয়েকশ নেতাকর্মীকে আসামি করে তিনটি মামলা করা হয় থানায়।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের তারিখ সামনে রেখে সরকার দেশে ‘অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির উসকানি’ দিচ্ছে।আমাদের একেবারে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের গ্রেপ্তার করছে। একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, যেখানে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করিনি, অথচ গ্রেপ্তার অভিযান চলছে, সবসময় হুমকি-টুমকি দিচ্ছে। দেশের যে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, সেটা তারা (সরকার) নিজেরাই বিনষ্ট করছে, অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে।বিএনপি মহাসচিবের ভাষায়, ‘একদলীয় শাসনব্যবস্থা’ পাকাপোক্ত করতে বিএনপি ও বিরোধীকে বাদ দিয়ে ‘একদলীয় নির্বাচন করার নীল নকশা বাস্তবায়নই’ এর উদ্দেশ্য।সরকারের তরফ থেকে এই উসকানিমূলক কাজগুলো শুরু হয়েছে যাতে বিএনপি নির্বাচনে আসতে না পারে।আগামী ৮ জানুয়ারি এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া দোষী সাব্যস্ত হলে তার যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে। সেক্ষেত্রে এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য হবেন তিনি। বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, সেদিন যেনতেন কোনো রায় মেনে নেওয়া হবে না। অন্যদিকে সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা পাল্টা হুঁশিয়ারিতে বলে আসছেন, রায় ঘিরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হতে দেওয়া হবে না।

ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা, সেই মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা এবং তাকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে আবার একটা অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করাই সরকারের মূল উদ্দেশ্য। সেজন্য তারা গ্রেপ্তারের এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।দমননীতি’ বাদ দিয়ে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক নেতাকে মুক্তি দিয়ে ভোটের পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সাথে কাউকে দেখা করতে দিচ্ছে না। তিনি একজন বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ। তাকে প্রতিদিন ওষুধ সেবন করতে হয়। ওষুধগুলো পর্যন্ত সঙ্গে নিতে দেওয়া হয়নি।তিনি অভিযোগ করেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে পুলিশ মঙ্গলবার রাতে ‘তুলে নিয়ে গেলেও’ এখন পর্যন্ত তা স্বীকার করেনি।আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকার সাহেবের উত্তরার বাসায় পুলিশ গতরাতে গেছে খোঁজ করেছে। যুবদলের সাবেক সহ সম্পাদক গাজী হাবিব হাসান রিন্টুকে গতরাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলীকে আবার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এইভাবে দমনপীড়ন চলছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান ও জিনজিরা যুব দলের সভাপতি মামুনের বাসায় পুলিশ মঙ্গলবার রাত আর বুধবার সকালে ‘অভিযান’ চালিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে দলের সহ সম্পাদক অর্পনা রায়, ছেলের স্ত্রী নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ ও মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।