নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক’ সরকারের যে দাবি বিএনপি জানিয়ে আসছে, তা আবারও প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বুধবার সংসদে বলেছেন, তারা (বিএনপি) অসাংবিধানিকভাবে সহায়ক সরকারের দাবি করে আসছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের সরকার গণতন্ত্রকে সবসময় সমুন্নত রাখবে। সেজন্য সংবিধান পরিপন্থি কোনো সরকার ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব না।

আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করার পর নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামে বিএনপি।দাবি না মানায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার পর নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক’ সরকারের দাবি তুলেছে তারা, তবে এর রূপরেখা এখনও তারা দেয়নি।এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১২ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের সময় গতবারের মতো ছোট সরকার গঠনের ইঙ্গিত দিলে তা নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেয় বিএনপি।বিএনপির সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে আসা শেষ হাসিনা বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সহায়ক সরকারের প্রস্তাবও নাকচ করেন।

তিনি বলেন, আমি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলেছিলাম।তার মানে, সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালন করবে, সরকারের পরিসর ছোট করা হবে। সরকার নির্বাচনকালীন সময়ে শুধু রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করবে, কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবে না।বিএনপির প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি জন্ম নিয়েছে মার্শাল ল জারি করে সংবিধান লঙ্ঘন করার মাধ্যমে অবৈধ পথে, তাই অবৈধ দাবি করাটা তাদের অভ্যাস।

জিয়াউর রহমানের ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোটারবিহীন গণভোট করেছিল বিএনপি। সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ না করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে।জিয়ার ওই ক্ষমতাগ্রহণ আদালত পরে অবৈধ ঘোষণা করে।তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিতর্কিত করার জন্য বিএনপিকেই দায়ী করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।২০০৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্পষ্ট রূপরেখা থাকা সত্ত্বেও তাদের পছন্দসই ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার চেষ্টা করে নির্বাচনের নামে প্রহসন করার উদ্দেশ্য থাকায় দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।এসব ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, বিএনপি কোনোদিনই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার পক্ষে ছিল না।

সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীদের অবসরের বয়সসীমা বড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপতত বাড়ানো সম্ভব না, পরবর্তীতে দেখা যাবে।প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি করার কোন পরিকল্পনা সরকারের আপাতত নেই। ভবিষ্যতে এ বিষয়টি দেখা যাবে। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন অবসরসীমা বাড়ানো হয়নি। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে অবসরের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৬৯ বছর করে দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ৬০ বছর করে দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, যদি অবসরের বয়সসীমা শুধু বাড়ানোই হয় তবে নীচের স্তরে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটে এবং নতুনদের চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ অনেক হ্রাস পায়। তাই যত বেশি অবসরের বয়স বাড়ানো হবে তত চাকরিতে প্রবেশ কমে যাবে। আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট ছিল, এখন তেমন সেশনজট নেই। ফলে চাকরিতে প্রবেশের জন্য এখন অনেক সময় পাচ্ছে। তাই এখন আর অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা নেই।আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, দেশের ভেতরে বিনিয়োগের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধাই নিশ্চিত করেছে সরকার। কিন্তু দেশে বিনিয়োগ না করে যারা অর্থ পাচার করতে চায় তারা তো তা করতেই চাইবে। তিনি আরও বলেন, টাকা পাচার করলে আমরা তা শনাক্ত করে দেশে ফেরত আনছি। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের পাচারকৃত অর্থ আমরা দেশে ফেরত এনেছি। অন্যরা যারা অর্থ পাচার করছে তা দেশে ফেরত আনতে সরকার যথেষ্ট তৎপর রয়েছে।