গত আড়াই বছরে বরিশালের গৌরনদী মডেল থানায় কর্মরত চার জন ওসিকে মাদকে সহায়তা, মাদক দিয়ে হয়রানী ও দূর্নীতির অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যহার হওয়া ওসিদের বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার ও ডিআইজি কার্যালয়ে এবং বরিশাল পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। গৌরনদী মডেল থানা এখন ওসি প্রত্যাহারের আতঙ্কের থানা হিসেবে পরিচিত।

থানা ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর গৌরনদী মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন মো. সাজ্জাদ হোসেন। দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই দুপুরে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. সাজ্জাদ হোসেনকে বরিশাল পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়। মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অভিযোগের সত্যতা ছিল না। একটি বাস দূর্ঘটনায় মহাসড়কের দু’পাশে শতশত যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টির ফলে যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হওয়ার কারণে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ এনে তৎকালীন ডিআইজি স্যারের নির্দেশে বরিশাল জেলার তৎকালিন পুলিশ সুপার এস.এম আক্তারুজ্জামান পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করেন।

২০১৫ সালের ১০ আগস্ট গৌরনদী মডেল থানায় যোগদান করেন ওসি আলাউদ্দিন মিলন। ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ গৌরনদীর কটকস্থল গ্রামের মাদক বিক্রেতা হীরা মাঝিসহ ৩ মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এ সময় মাদক বিক্রেতাদের সাথে সখ্যতার অভিযোগ উঠার প্রেক্ষিতে ৩০ মার্চ ওসি আলাউদ্দিন মিলনকে ক্লোজড করে বরিশাল ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করে হয়। তিনিও তার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

২০১৭ সালের ১ এপ্রিল গৌরনদী মডেল থানার ওসি হিসেবে যোগদান করেন মো. ফিরোজ কবির। যোগদানের পর মাদক বিরোধী সভা-সমাবেশ করে মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে দুই মাসে অনেকটাই সফল হন। পরবর্তিতে মাদক বিরোধী অভিযান ও মাদক নির্মূলের অন্তরালে ওসি মো. ফিরোজ কবির ব্যবসায়ী ও প্রবাসীসহ বৃত্তবানদের মাদকের ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ও মাদকের অন্তরালে বানিজ্য শুরু করেন ওসি ফিরোজ কবির। এ ছাড়া সাধারন মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অর্থের জন্য হয়রনী শুরু করেন। এ ঘটনায় উপজেলার ইল্লা গ্রামের নির্যাতিত প্রবাসী মনির সরদারের বাবা মোসলেম সরদার, খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ইউপি সদস্য আরজ আলী সরদার, উপজেলার দিয়াসুর গ্রামের ব্যবসায়ী ছবেদ আলীসহ কয়েকজন ভূক্তভোগী পুলিশ সদর দপ্তরে ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। বরিশাল জেলার তৎকালিন পুলিশ সুপার এস.এম আক্তারুজ্জামান তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতার প্রেক্ষিতে যোগদানের ৪ মাসের মাথায় ৩১ জুলাই ওসি ফিরোজ কবিরকে গৌরনদী থানা থেকে ক্লোজড করে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এ ছাড়া ওসি ফিরোজ কবিরের বিরুদ্ধে কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন।

২০১৭ সালের ১ আগস্ট আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলামকে গৌরনদী থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। উপজেলার পালরদী মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র ও ছাত্রলীগকর্মী সাকির গোমস্তা হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত আসামি ফাহিমকে গ্রেফতারের পর থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয় । এ ঘটনায় পুলিশ তিন সদস্যে’র তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত রির্পোটে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার ওসি মনিরুল ইসলামকে গত ২৬ জানুযারি প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। বর্তমানে পরিদর্শক মো. ফিরোজ কবির ও পরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংযুক্ত রয়েছে বলে পুলিশ সুপার মো. সাইফুল জানান।