প্রতিটি মানুষের কোন না কোন শখ আছে। আর ফুল ভালবাসেনা এমন মানুষ ও খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে নওগাঁয় ৫ ভাইয়ের শখ ও ফুলের প্রতি ভালবাসা একটু ভিন্নরকম। ৫ ভাই মিলেমিশে দেশী ও বিদেশী প্রায় অর্ধশত প্রজাতীর ফুলের গাছ লাগিয়ে নিজ পরিচর্যায় গড়েছেন একটি সৌখীন পুকুরপাড়। পুকুরের চারপাশে শতশত ফুলের গাছ আর সেই সাথেই হচ্ছে পুকুরে মাছ চাষ। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতীর ফুলের গাছে ভরা এ পুকুর দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিনিয়তই লোকজন আসছে এই পুকুর পাড়ে। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নের কুন্দুনা গ্রামের জৈনক কাজেম উদ্দীন সরদারের ৫ ছেলে আনারুল ইসলাম (৪৮), ইউনুস আলী (৪২), আতাউর রহমান (৩৮), আলতাব হোসেন (৩৬) ও ইউসুফ আলী (৩০) ওরা আপন ৫ ভাই। তারা সকলেই ছোট বেলা থেকেই ফুলকে ভালবেশে বিভিন্ন প্রজাতীর ফুলের গাছ বাড়ির উঠান সহ আশে-পাশের জায়গাতে রোপন করতেন। এক পর্যায়ে ৫ ভাই মিলে পরামর্শ করে বাড়ির কাছে ধনজইল-মাতাজীহাট পাকা সড়কের সাথে লাগানো তাদের নিজস্ব পুকুর পাড় দেশী-বিদেশী ফুলের গাছ দিয়ে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেন। এর পরই ৫ ভাই মিলে আজ থেকে প্রায় ৩ বছর পূর্বে প্রথমে দেশী জাতের কিছু ফুলের গাছ রোপনের মধ্যেদিয়ে সৌখিন পুকুর পার গড়ে তোলার স্বপ্ন শুরু করলেও মাত্র ৩ বছরেই তাদের স্বপ্ন পূরন করতে সক্ষম হয়েছেন ৫ ভাই।

পুকুরটির চারপাশের্ পাড়ে ইতিমধ্যেই তাদের রোপনকৃত পপি,পিটুনীয়া, চন্দ্র মল্লিকা, কসমস, জেনিয়া, সেলফিয়া, পান বাটিয়া সহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির দেশি-বিদেশী জাতের ফুলের গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। আর দেশী-বিদেশী ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো সৌখিন পুকুরটি দেখতে এলাকা সহ আশে-পাশের লোকজন প্রতিনিয়তই আসতে শুরু করেছে এ পুকুর পাড়ে। নওগাঁ জেলা শহর থেকে ২৪ কিমি দূরে প্রত্যান্ত গ্রাম্যঞ্চলের ধনজইল-মাতাজীহাট পাকা সড়কের ধারের ৫ ভাইয়ের এ সৌখিন পুকুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেল, ছোট আকারের এ পুকুরটির চারি পাশের দেশী ও বিদেশী প্রায় অর্ধশতাধিক প্রজাতির শত শত ফুল গাছে বাহারী রকমের প্রচুর পরিমান ফুল ফুটে রয়েছে। পুকুরের মাঝখানে বসানো হয়েছে একটি পানির ফোয়ারা, তাছাড়া পুকুরের মাঝে পানিতে সদ্য ফোটা লাল শাপলা ও ভাসছে এক কথায় পুকুরটি যেকোন লোকজন দেখলে
তাকে সুন্দর করে সাজানো-গোছানো সৌখিন পুকুর হিসেবেই মেনে নিতে হবে এই পুকুরটিকে।

পুকুরের পাড়ে ফুল গাছের যতœ (নিরানী) কাজেরত ৫ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ভাই আনারুল ইসলাম এর সাথে সাংবাদিক
পরিচয় দিয়ে কথা বলা হলে, তিনি বলেন, আমরা ৫ ভাই সবাই ছোট থেকেই ফুল খুব ভাল বাসতাম। এজন্য আমরা শখ করেই পুকুর পারটি ফুলগাছ দিয়ে সাজিয়েছি , আমরা বাড়ির সকলে মিলেই প্রতিদিন ফুল গাছের যতœ নেয়া সহ যাবতীয় পরিচর্যা করি। কাজের ফাঁকে তিনি আরো জানান, আমাদের এ সৌখিন পুকুরটি ও দেশী-বিদেশী ফুল দেখার জন্য প্রতিনিয়তই এলাকা সহ বিভিন্ন স্থান থেকে নারী-পুরুষ ও শিশুরা এসে ঘুড়ে ঘুড়ে দেখেন এতে আমরা ও আনন্দ পাই। এসময় সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, আমরা কোন টাকা পয়সা নেই না। শখকরে গড়েছি লোকজন দেখে আনন্দ পাচ্ছে এতে আমরাও আনন্দ পাচ্ছি। সবার ছোট ভাই রাইগাঁ উচ্চ-বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইউসুফ আলী জানান, আমরা পাঁচ ভাই এখনো একই সংসারের মধ্যে রয়েছি মিলেমিশে। আমরা ছোট বেলা থেকেই ফুল ভাল বাসতাম সবাই। আর এ ভালবাসা
থেকেই শখ করে আমরা প্রথমে একটি পুকুর পাড় দেশী- বিদেশী ফুল গাছদিয়ে সাজিয়েছি মাত্র। মেজ ভাই আতাউর রহমান বলেন, মানুষজন যেভাবে আমাদের শখের ফুল বাগান সহ সৌখিন পুকুর দেখতে আসছে, এতে করে আমাদের আগ্রহ বেড়েই যাচ্ছে। সৌখিন এ পুকুরের সাথেই আরো জায়গাঁ ও দুটি পুকুর আছে আমাদের ৫ ভাইয়ের। আগামীতে আরো বিদেশী ও দেশী জাতের ফুল গাছ রোপন করা সহ ৩টি পুকুরকেই সৌখিন পুকুর হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্চা রয়েছে আমাদের বলেও জানান তিনি । ইউনুচ আলী জানান, আমরা শখের বসে পুকুরের চারপাশ যেমন ফুল গাছ দিয়ে সাজিয়েছি তেমনিভাবে পুকুরে মাছ ও চাষ করছি। বর্তমানে সৌখিন পুকুরটিতে শুধু দেশী জাতের শিং মাছ চাষ করা হচ্ছে।