ইসলামিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দুদিনের ওআইসি পর্যটনমন্ত্রীদের ১০ম ইসলামিক সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। সদস্য দেশগুলোর পর্যটন খাতকে বিশ্ব পর্যটকদের সামনে তুলে ধরা এবং পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে মন্ত্রী পর্যায়ের এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তা, বৈচিত্যময় সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক ঐতিহ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব কিছুই পর্যটকদের কাছে স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি বাংলাদেশের পাশে থাকায় কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও সহযোগিতার ভিত্তিতে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিনিময় নিজেদের মননের সহায়তা করতে হবে। আমি মনে করি পর্যটনশিল্প অন্যতম শিল্প যেখানে একসঙ্গে কাজ করার সব থেকে বড় সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ইসলামিক পণ্য ও সেবার বিশ্বব্যাপী সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশাল ভোক্তা থাকায় বিশ্বাস-ভিত্তিক পণ্য ও সেবার সম্প্রসারণের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম দেশের সরকারপ্রধান হাসিনা বলেন, অনেক দেশের কাছে ইসলামী অর্থনীতির ধারণা একটি নতুন বিষয় হলেও এর বিকাশ অব্যাহত থাকবে এবং মুসলমানদের মাধ্যমেই এটি পরিচালিত হবে।

বর্তমানে অমুসলিমদের কাছেও ইসলামিক পণ্য ও সেবা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ইসলামিক পণ্য ও সেবার একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে ভ্রমণ ও পর্যটন। হালাল খাদ্য, ইসলামিক অর্থনীতি, হালাল ওষুধ ও প্রসাধনী এবং হালাল পর্যটন ইসলামিক অর্থনীতির বর্ধিষ্ণু খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম।এ অর্থনীতি ও হালাল পর্যটনের উন্নয়নে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব জোরদার করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরস্পরের কাছে আসা এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে এ সম্মেলন নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে বলে তিনি আশা করছেন।রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে ওআইসিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দৃঢ়ভাবে সমর্থন দেওয়ায় আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।

মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের মুখে পালিয়ে আসা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়ার কথা তুলে শেখ হাসিনা।এ বিষয়ে ওআইসির বহুমাত্রিক ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “সারা বিশ্বের মুসলমানদের মিলিত কণ্ঠস্বর হিসেবে ওআইসির সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা মুসলিম বিশ্বের স্বার্থরক্ষায় সহায়ক হচ্ছে।মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।পর্যটন শিল্পের বিকাশে মুসলিম দেশগুলোর একসঙ্গে কাজ করার বড় সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।বাংলাদেশের পর্যটন খাত নিয়ে আলোচনায় কক্সবাজার, সুন্দরবন, কুয়াকাটা ও সিলেটের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের রয়েছে সুদীর্ঘ মেরিন ড্রাইভসহ বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ও নিরবচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবন বাংলাদেশে অবস্থিত। সাগরকন্যা কুয়াকাটা অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শত শত সবুজ চা বাগান আপনাকে দেবে অবকাশ যাপনের চোখ জুড়ানো মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ।তিনি বলেন, দেশজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা শত শত নদী বাংলাদেশকে ছবির মতো সুন্দর করে তুলেছে।এছাড়া হাজার বছরের ইতিহাস ও প্রতœসমৃদ্ধ বিভিন্ন স্থান, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক ঐতিহ্য আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে ‘অত্যন্ত আকর্ষণীয়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।বাংলাদেশের মানুষের বন্ধুভাবাপন্নতা ও আতিথেয়তার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।ইসলামিক অর্থনীতি একটি নতুন বিষয় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ইসলামিক পণ্য ও সেবার বিশ্বব্যাপী সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা এবং একটি বিশাল ভোক্তা থাকার কারণে বিশ্বাস ভিত্তিক পণ্য ও সেবার সম্প্রসারণে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছেও এসব পণ্য ও সেবা জনপ্রিয়তা লাভ করছে। একইসঙ্গে আমাদের ইসলামিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে। হালাল খাদ্য, ইসলামিক অর্থনীতি, হালাল ওষুধ ও প্রসাধনী, হালাল পর্যটন ইত্যাদি ইসলামিক অর্থনীতির বর্ধিষ্ণু খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই খাতগুলোর উন্নয়নে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা ও অংশীদারত্ব আরো জোরদার করা প্রয়োজন।সম্মেলনের শুরুতেই আগামী দুই বছরের জন্য ইসলামিক কনফারেন্স অব ট্যুরিজম মিনিস্টারসের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী শাহজাহান কামাল।