সাংবাদিকদের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা করা হয়নি-জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রয়োজনে তাদের এ থেকে বাইরে রাখা হবে।মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে গিয়ে কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ৩২ ধারায় ‘গুপ্তচরবৃত্তি’র মামলা হলে তার পক্ষে আমি-আইনমন্ত্রী লড়াই করবো বলেন তিনি।

ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ‘গুপ্তচরবৃত্তির’ ক্ষেত্রে এ ধারা প্রযোজ্য উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, রিজার্ভ ব্যাংকের টাকা ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে লুট করা হয়েছেÑএসব ক্ষেত্রে বিচারের জন্য এ ধারা করা হয়েছে।রাষ্ট্র ও সরকারের গোপন তথ্যের পাচার ঠেকাতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা করা হয়েছে সাংবাদিকদের এ আইন নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই বলেন মন্ত্রী।বিচারাঙ্গনে দুর্নীতি হচ্ছে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের এমন মন্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান আইনমন্ত্রী। প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা নিয়ে সমালোচনার মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রয়োজন হলে ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সুরক্ষায়’ ওই ধারার সঙ্গে একটি উপ ধারা যোগ করা যেতে পারে।

তবে ওই ধারা সাংবাদিকদের ‘ঘায়েল করার জন্য করা হয়নি’ মন্তব্য করে বিষয়টি ‘নিজেদের ঘাড়ে’ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বাধা হবে না দাবি করে তিনি বলেন, ন্যায়সঙ্গত কারণ থাকলে দরকার হলে জনস্বার্থে ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সুরক্ষায় ৩২ ধারায় একটি সাব সেকশন অন্তভূর্ক্ত করা হবে।

তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের হয়রানি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্বের অভিযোগ ওঠায় প্রতিবাদের মুখে ওই ধারাটি বাতিলের উদ্যোগের সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করছে সরকার।গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন পাওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ৫৭ ধারার বিষয়বস্তুগুলো আরও বিশদ আকারে প্রস্তাবিত নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারায় সরকারি গোপন তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল উপায়ে ধারণ, স্থানান্তর বা সংরক্ষণ করা এবং তাতে সহায়তাকে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হিসেবে গণ্য করে ১৪ বছরের কারাদ- বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে।এ আইন পাস হলে তা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কণ্ঠ রোধ করার জন্য ৫৭ ধারার চেয়েও আরও বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংবাদকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীরা। সে বিষয়টি তুলে ধরে ল’রিপোর্টার্স ফোরমের অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ৩২ ধারা বাদ দেওয়ার কোনো উদ্যোগ সরকার নেবে কি না।

জবাবে আনিসুল হক বলেন, ২০১৩ সালে ৫৭ ধারার সাজা বৃদ্ধি করা হয়েছিল। আর এখন সরকার ওই আইন থেকে ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করে দিচ্ছে।আজকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধগুলোকে অনেক স্পষ্ট করা হয়েছে। ছোটো অপরাধের জন্য ছোটো সাজা, বড় অপরাধের জস্য বড় সাজার বিধান রাখা হচ্ছে। ৩২ ধারায় যে অপরাধগুলো রাখা হয়েছে তার সবগুলোই পেনাল কোডের অপরাধ।

৩২ ধারা নিয়ে অভয় দিয়ে মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের ঘায়েল করার জন্য আইন করা হয়নি, কেন আপনারা ঘাড়ে নিচ্ছেন। সত্য উদঘাটন করেন, তাহলে আপনাদের ৩২ ধারায় ফেলতে পারবে না। কোনো সাংবাদিকের অনুসন্ধানী কাজের জন্য কোনো মামলা হলে তার পক্ষে আদালতে দাঁড়াবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন পেশায় আইনজীবী আনিসুল হক। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ডেইলি স্টারের সাংবাদিক আশুতোষ সরকার। সংগঠনের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।