বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ আদালতের সাজার রায়, কারাগারে পাঠানোসহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিকালে তিনি এ ব্রিফ করেন। ব্রিফিংয়ে আমন্ত্রিত আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর মধ্যে ছিল-; বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, এপি, এফপি, জার্মান রেডিও ডয়চে ভেলে। অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির ব্রিফিংয়ে অংশ নেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জানান, দেশে অবস্থানরত বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা সংক্রান্ত তথ্য ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবহিত করতেই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। কেবলমাত্র বাংলাদেশে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর জন্যই এ ব্রিফিং আয়োজন করা হয়।এ রায়কে অবৈধ, বেআইনি, আইনের লঙ্ঘন অভিহিত করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে দূরে রাখা সম্ভব হবে না।ব্রিফিং শেষে বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রিফিংয়ে বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের আইনি ও রাজনৈতিক দিকগুলো অবহিত করেছেন বিএনপি নেতারা। এ সময় রায়কে ঘিরে সারাদেশে আটক হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিও জানান তারা।ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই রায় দেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখার জন্য। তাকে যে ধারায় দন্ড দেওয়া হয়েছে, সেটা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ধারা নয়। তাই দুর্নীতির দায়ে খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করা যায়নি বলে দাবি করেন তিনি।
রায়ের আইনি দিকগুলো তুলে ধরে ব্যারিস্টার মওদুদ ও খন্দকার মোশাররফ বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে খালেদা জিয়ার কোনও সংযোগ নেই। এই মামলার বাকি পাঁচ আসামির ক্ষেত্রে দুর্নীতির সংযোগের কথা বলা হলেও রায়ে খালেদা জিয়ার দুর্নীতির সংযোগের কথা বলা নেই।বিএনপি নেতারা বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, সরকারি তহবিলে এতিমদের জন্য কোনও তহবিল নেই। কুয়েত থেকে আসা টাকা লেনদেন করেছেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। টাকা ছাড় করার জন্য তিনি সরকারকে ব্যবহার করেছেন। সেই টাকার কিছুটা খরচ হলেও বাকিটা ব্যাংকে আছে, যা এখন সুদে-মূলে তিনগুণ হয়েছে। ফলে তহবিল তছরুপের কোনও বিষয় এই মামলায় নেই।
বিএনপি নেতারা বলেন, এই তহবিলে তো গ্র্যাফটিংও (অবৈধ উপায়ে সুবিধা নেওয়া) হয়নি। তাহলে খালেদা জিয়াকে কেন দ- দেওয়া হলো- এই প্রশ্ন তুলে বিএনপি নেতারা রায়কে অবৈধ, বেআইনি ও আইনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন।মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের মূল লক্ষ্য খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। কিন্তু সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমরা উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব। সরকার বাধা না দিলে তিনি প্রচলিত আইনেই বেরিয়ে আসবেন।এ সময় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে ঘিরে সারাদেশে বিএনপির সাড়ে ৩ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বিএনপি চেয়ারপারসনসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন।তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই তিনি (তারেক রহমান) এই দায়িত্ব পেয়েছেন। তার ও দলের স্থায়ী কমিটির নেতৃত্বেই দল চলবে।