জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মুখপাত্র এ প্রতিনিধির নিকট প্রেরিত এক লিখিত প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকারকে আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। লিখিত প্রতিক্রিয়ায় মুখপাত্র বলেন, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়টি আমরা সম্যক অবগত আছি। মূলত, মামলার প্রক্রিয়াটি যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এরই আলোকে, আমরা বেগম জিয়ার বিচার প্রক্রিয়ায় আইনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ প্রয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
মুখপাত্র বলেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ সরকারকে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আইনের শাসনের প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমরা আবারো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং বিশ্বাসযোগ্য করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারকে প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকার এবং মুক্তভাবে মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।
এদিকে নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের বিষয়টি ছিল সাংবাদিকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ওই দিনের প্রেসব্রিফিংয়ে দুই বাংলাদেশী সাংবাদিকসহ দেশী বিদেশী মোট তিনজন সাংবাদিক জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের নিকট খালেদা জিয়ার মামলায় সাজা ঘোষণার বিষয়টি তুলে ধরে এ বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া জানতে চান। জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য নেই’- বলে মন্তব্য করেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে এই প্রতিনিধির এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের ডেপুটি স্পোকসপার্সন ফারহান হক লিখিতভভাবে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়টি জাতিসংঘ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এ বিষয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয়েছে কি না তা জাতিসংঘ খতিয়ে দেখছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় এবং রায়-পরবর্তী ঘটনপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করছে জাতিসঙ্ঘ । বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে দেয়া নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক। নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ের শুরুতেই প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন জাতিসঙ্ঘ সংবাদদাতা ইমরান আনসারী। এসময় তিনি বলেন, আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের প্রধান নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় দ-িত করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ রায়ের প্রতিবাদ জানাতে লাখো লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে । প্রতিবাদ বিক্ষোভ বন্ধে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেছে। তাজা গুলি বর্ষণ করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে হাজারো নেতা কর্মীদের আটক করা হয়েছে। আপনি আরো জেনে থাকবেন যে আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন বেগম খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক নির্বাচন থেকে বিচ্ছিন্ন করতেই এ রায় দেয়া হয়েছে। এমনি বাস্তবতায় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব এবিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা? এছাড়া রাজনৈতিক এ সংকট নিরসনে তিনি কোনো বিশেষ দূত বাংলাদেশে পাঠাবেন কিনা?জবাবে ফারহান হক বলেন, বিষয়টি বিষয়টি মাত্রই আমাদের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। খালেদা জিয়ার আটকের বিষয়টি উদ্বেগজনক। বিষয়টির পেছনে কী আছে তা আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখছি। এবিষয়ে জাতিসঙ্ঘ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। তিনি আরো বলেন, আমরা সহিংসতার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছি। উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ রায়ের পর আর কি কোনো আশা আছে বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবার? জবাবে ফরহান হক বলেন, এ রায়ের প্রভাব কী হবে তা আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে দেখছি। তবে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে জাতিসঙ্ঘের অবস্থান।সাংবাদিক মাথিউ জানতে চান, বাংলাদেশে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযোগ শোনা যায় বিক্ষোভ দমাতে তারা তাজা বুলেট ব্যবহার করে। আবার এসব সদস্যদের শান্তিরক্ষী মিশনে মোতায়েন করা হয়। জবাবে ফরহান বলেন, শান্তিরক্ষী মিশনে মোতায়েনের ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘ তার মানদন্ড বজায় রেখে চলে।