পুরান ঢাকার আলু বাজার বড় মসজিদের পাশে শনিবার সকালে ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ হয়েছে বলে গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে ডিপিডিসি।ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই ডিপিডিসি’র প্রধান প্রকৌশলী (সেন্ট্রাল) সারোয়ারে কায়নাতে নূর এবং বাংলাবাজারের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিদর্শন এবং তদন্ত করেন। পরে ডিপিডিসির ডিজিএম, (পাবলিক রিলেশন্স) মো: শামীমুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞতিতে পুরো তদন্তে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

প্রসঙ্গত, পুরান ঢাকার বংশালে ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণে ছয়জন শিশু আহত হয়েছে যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বংশাল থানার এসআই শহিদুল ইসলাম সকালে বলেছিলেন, মসজিদের পাশে বিদ্যুতের তিনটি টান্সফর্মারের একটি বিস্ফোরিত হলে আতঙ্কে ছুটোছুটিতে ছয়টি শিশু আহত হয়।তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আগুনের ক্ষত নিয়ে ভর্তি আছে ৫ শিশু।এছাড়া আহত হয়ে ভর্তি আছে অন্য শিশুটি।অগ্নিদদ্ধদের মধ্যে মোস্তাকীনের (০৮) দেহের ছয়ভাগ, আবদুর রহমানের (০৮) দেহের তিন ভাগ, আশিকের (০৮) চার ভাগ, জাবেদের (০৭) দেহের এক ভাগ এবং সালমানের (০৭) দেহের ১৪ ভাগ পুড়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো.বাচ্চু মিয়া বলেন, আহত আরেক শিশু হলেন সাজ্জাদ (০৫)।

ডিপিডিসির বিজ্ঞতিতে বলা হয়, ডিপিডিসি’র বংশাল দপ্তরের আওতাধীন সিদ্দিক বাজার ১১ কেভি ওভারহেড ফিডার আর্থফল্ট রিলে দেখিয়ে ট্রিপ করে। প্রায় ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পরও কোন সংবাদ না পেয়ে ট্রায়াল দিলে ফিডারটি সাথে সাথে চালু হয়ে যায়। ফিডার চালুর সময় সকাল আটটা চল্লিশে । পরবর্তীতে বংশাল থানা সকাল নয়টা আটচািল্লশে ফোন করে বংশাল কন্ট্রোল রুমকে জানায় যে, আলুবাজার বড় মসজিদের সামনে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হয়েছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সকাল নয়টা পঞ্চাশে ডিপিডিসি’র একটি কারিগরি দল সেখানে পাঠানো হয়।

কারিগরি দল গিয়ে দেখতে পায়, মোহাম্মদিয়া হাফিজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা, আলুবাজার বড় মসজিদ, ৪২, হাজী ওসমান গণি রোডে ৫-তলা নির্মাণাধীন মসজিদ ও মাদ্রাসা ভবনের সামনে ৩য় তলায় জানালার গ্রীলের সাথে টানানো প্লাষ্টিকের ত্রিপলটির জ্বলা গলিত অংশ জানালার গ্রিলে বিভিন্ন জায়গায় লেগে আছে। ট্রান্সফরমার এর কোন বিস্ফোরণ হয় নাই। টোকা বা ফিউজ অক্ষত অবস্থায় আছে এবং এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু ও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। পরে সকাল পপৗনে এগারটায় ডিপিডিসি’র প্রধান প্রকৌশলী (সেন্ট্রাল) এবং বাংলাবাজারের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সরেজমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তদন্ত কাজ পরিচালনা করেন। তদন্তে দেখা যায়, এটি একটা ৫তলা নির্মাণাধীন ভবন।এই ভবনের সন্মুখ অংশ ঘেষে ১১ কেভি সিদ্দিক বাজার ওভারহেড ফিডার বিদ্যমান এবং ভবনটি ঘেষে ৩টি বিতরণ ট্রান্সফরমার স্থাপিত আছে। ট্রান্সফরমারের নীচ বরাবর রাস্তার উপরে ১-সূতা সাইজের প্রায় ২-ফিট লম্বা জি.আই তার পড়ে থাকতে দেখা যায়। ৫-তলার উপরের ছাঁদে কয়েক টন রডের বান্ডিল ও নির্মাণ সামগ্রী রাখা আছে। রডের বান্ডিল বাঁধার ১-সূতা সাইজের বিভিন্ন পরিমাপের বেশকিছু জি.আই তারের টুকরা যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়। ২টি তারের টুকরা রাস্তা সংলগ্ন peripheral wall এর উপরেও পড়ে থাকতে দেখা যায়। এতে ধারণা করা যায় যে, সকালের দিকে সম্ভবত কাক এর মাধ্যমে জি.আই তারের ২/১ টি টুকরা ১১ কেভি লাইনের উপর পিন ইনসুলেটর সংলগ্ন অংশে পড়ে ফ্লাসিং হয় এবং আর্থফল্টে ফিডারটি ট্রিপ করে। ফ্লাসিংয়ের কারণে গ্লাসবিহীন জানালা সংলগ্ন ঝুলন্ত অবস্থায় স্থাপিত প্লাষ্টিকের ত্রিপলে আগুন ধরে যায় এবং প্লাষ্টিকের ত্রিপলের জ্বলন্ত অংশ মাদ্রাসার ৩য় তলায় অধ্যয়নরত অবস্থায় কয়েকজন ছাত্রের শরীরের বিভিন্ন অংশে গিয়ে পড়ে। জানা যায়, এতে মাদ্রাসার ৫/৬ জন ছাত্র সামান্য আহত ও অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। বর্তমানে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

উল্লেখ্য যে, প্লাষ্টিকের ত্রিপলের জ্বলন্ত অংশের অংশবিশেষ জানালার গ্রিলে, মেঝে ও কার্পেট এর উপর এবং ১১ কেভি ফিডারের ডগ তারে লেগে থাকতেও দেখা যায়।পরিদর্শনকালে স্থানীয় কাউন্সিলর মীর সমীর-এর সহিত ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। তিনি জানান যে, সংঘটিত দূর্ঘটনায় বিদ্যুৎ বিভাগের কোন গাফিলতি নেই। নির্মাণ কাজের কারণে এ নির্মাণাধীন ভবনে দূর্ঘটনাটি ঘটেছে। ট্রান্সফরমারটি বিস্ফোরতি হয় নাই, অক্ষত অবস্থায় আছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সম্পূর্ণ নির্দোষ।