গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার একটি কেন্দ্রে শনিবার মোবাইল ফোনে গণিতের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পাওয়া গেছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সময় তিন ছাত্র এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য দু’ শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছে। এছাড়া আরো ছয় ছাত্রকে এক বছরের জন্য বাহিস্কার করা হয়েছে। অপর ঘটনায় প্রশ্নপত্র নিয়ে কেন্দ্রের বাইরে যাওয়ার সময় জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা বহমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের গেইট থেকে ওই কেন্দ্রের সহকারী কেন্দ্র সচিবকে পুলিশ আটক করেছে। আটকৃত আমজাদ হোসেন নাহীন শ্রীপুরের রেড়াইদেরচালা আলহাজ¦ ধনাই বেপারী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি মাওনা বহমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহকারী কেন্দ্র সচিব হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়া কালীগঞ্জে আটককৃতরা হলেন, ওই উপজেলার চুপাইর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জিব কুমারদেব নাথ ওরফে সবুজ ও জাঙ্গালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলাম ওরফে মানিক। ছাত্ররা হলো প্রণয় দাস, সঞ্জয় শীল ও সজিব দাস।

উপজেলা প্রশাসন ও পুুলিশ জানায়, কালীগঞ্জ উপজেলার সবগুলি কেন্দ্রেই শনিবার সকাল থেকে পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. সোহাগ হোসেন ও থানা পুলিশ। সকালে কালীগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া মায়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় একটি কক্ষে প্রণয় দাস নামের এক ছাত্রের কাছে মোবাইল ফোন দেখা যায়। পরে তার কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি জব্দ করে পরীক্ষা করে দেখা যায় তাতে গনিতের ‘খ’ সেটের এমসিকিউ প্রশ্নের হুবহু মিল থাকা প্রশ্ন রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই কক্ষে আরো ৮ জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে ওই পরীক্ষার হলের দায়িত্বে ছিলেন চুপাইর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জিব কুমারদেব নাথ ও জাঙ্গালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলাম।

উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. সোহাগ হোসেন জানান, পরে তিনি ওই দুই শিক্ষক ও তিন শিক্ষার্থীকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। একই সঙ্গে তিন শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিস্কার ও ৬ জন শিক্ষার্থীকে একটি পরীক্ষার জন্য বহিস্কার করা হয়েছে।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলম চাঁদ জানান, তিন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া দুই শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এদিকে শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান জানান, নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সকাল পৌণে ১১টার দিকে আমজাদ হোসেন নাহীন কেন্দ্রের বাইরে যাচ্ছিলেন। এসময় গেইটের কাছে সন্দেহজনকভাবে তাকে তল্লাশী করে তার কাছে রচনামূলক (গণিত) প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে কেন্দ্র সচিব ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।

মাওনা বহমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব শাহজাহান জানান, ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত শিক্ষককে চলতি বছরের জন্য দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। গত বছর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট’র (এসএসসি) পরীক্ষা চলাকালীন থানা থেকে যথা সময়ে প্রশ্নপত্র সরবরাহ না করার অভিযোগে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল।

শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে পরীক্ষা সংক্রান্ত অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ ও পরে থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।