দুর্নীতির দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে প্রথম শ্রেণির (ডিভিশন) বন্দির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে কারাবিধি অনুযাযী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে করা আবেদনের প্রেক্ষিতে রোববার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান কারা কর্তৃপক্ষকে এ আদেশ দেন।শুনানিতে খালেদাকে ডিভিশন দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ডিভিশন পাওয়ার তিনটি বৈশিষ্ট্যই উনি (খালেদা) ধারণ করেন। একটি হচ্ছে- তিনি পার্টি প্রধান; দ্বিতীয় হলো- তিনি বেশ কয়েকবার নির্বাচিত এমপি এবং তিনি তিনবার এ দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনটি বিবেচনাতেই তিনি প্রথম শ্রেণি পান।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও সানাউল্লাহ মিয়া। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে বৃহস্পতিবার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। রোববারের শুনানিতে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, প্রথম শ্রেণি পাওয়ার বিষয়ে আবেদন নিয়ে আমরা নাজিমুদ্দিন রোড ও কেরানীগঞ্জ- উভয় জায়গায় গিয়েছিলাম। কারা কর্তৃপক্ষ এবং কারাগারের পুলিশ প্রধান আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাও আমরা মিডিয়ার সামনে মুখ খুলিনি।তার এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ বলেন, আপনারা দরজায় দরজায় ঘুরবেন কেন? আপনারাতো আইনজীবী। মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করে লাভ কি, ওরাতো আইন বোঝে না।আপনি ডিসির কাছে যান, তার কার্যালয় ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, ২৪ ঘণ্টা উনি অন ডিউটিতে আছেন। অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। এর আগে ডিভিশনের বিষয়ে বিষয়ে আদেশ চেয়ে করা খালেদার আবেদনের বিষয়ে দুদকের আইনজীবী বলেন, আমরা অর্থাৎ আদালত সরাসরি এটার বিষয়ে আদেশ দিতে পারি না। কারা কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দিতে পারি।তখন খালেদার আইনজীবীরা ‘আদালত সরাসরি ডিভিশন দেওয়ার বিষয়ে আদেশ দিতে পারেন’ বলে বক্তব্য তুলে ধরেন। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে কিছুটা বাদানুবাদ হওয়ার পর বিচারকের আদেশ আসে। রোববার আসামিপক্ষ আদালতের রায়ের কপিসহ আরও কিছু আদেশ ও কোনো কোনো সাক্ষীর জবানবন্দির নকল চেয়ে বিচারকের কাছে মৌখিক আবেদন জানান।এর আগে সানাউল্লাহ মিয়া বলেছিলেন, রায়ের দিনই তারা আদালতের কাছে সত্যায়িত কপির জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তা এখনও না মেলায় হাতে লেখা রায়েরই একটি সত্যায়িত অনুলিপি চাইবেন।

এদিকে ,কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলকোড অনুযায়ী ডিভিশন (প্রাপ্য প্রথম শ্রেণীর সুবিধা) দিতে আদালতের দেওয়া আদেশের কপি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন তার আইনজীবীরা। রোববার বিকেলে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়ার নেতৃত্বে ৯ আইনজীবী কারাগারে গিয়ে এ আদেশ জমা দেন। পরে কারাগার থেকে বেরিয়ে ফটকে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, জেলকোডের ৬১৭ ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়া ডিভিশন পাবেন। গত তিন দিন আমরা ডিভিশনের আদেশ দিতে পারিনি (কারা কর্তৃপক্ষকে), কিন্তু আইন অনুযায়ী জেল সুপার নিজেই ডিভিশন দিতে পারতেন। তিনি কেন এটা দেননি, সেটা আমরা জানি না। বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক বলেন, আমরা কোর্টে আবেদন করার পর আজকে কোর্ট ডিভিশনের অর্ডার দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আদালত তার প্রসেস সার্ভারের মাধ্যমে অর্ডার কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমরাও ডিআইজি প্রিজনের সঙ্গে দেখা করে অর্ডার পৌঁছে দিয়েছি। এখন খালেদা জিয়া জেলকোডের বিধান অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীর বন্দি হিসেবে সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্র“য়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড এবং তার ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেওয়া হয়।রায় ঘোষণার পরই সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে নেওয়া হয় নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। এরপর শনিবার (১০ ফেব্র“য়ারি) কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তার আইনজীবীরা। সাক্ষাৎ শেষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দেওয়া হয়নি। তাকে সাধারণ কয়েদি হিসেবে রাখা হয়েছে। তিনি অসুস্থ হিসেবে তার সঙ্গে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে যে গৃহকর্মী ফাতেমাকে রাখার কথা, তাকেও থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। এই প্রেক্ষিতে খালেদার ডিভিশন চেয়ে রোববার সকালে আইনজীবী ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ভুঁইয়া ও অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে আবেদন করেন।