বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে ডিভিশন (সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির সুবিধা) দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার আদালতের আদেশের পর ডিভিশন দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। তবে রায়ের সত্যায়িত কপি পাওয়ার আবেদনের বিষয়ে আদালত কোনো আদেশ দেননি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডিভিশন চেয়ে আজ ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। খালেদা জিয়া দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান, তাই তাঁকে ডিভিশন দেওয়ার নির্দেশনা চান তাঁরা।

শুনানি শেষে খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন বিচারক ড. আখতারুজ্জামান। আর রায়ের সত্যায়িত কপি পাওয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কোনো আদেশ দেননি বলেও জানান তাঁরা। খালেদা জিয়ার মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ বলেন, ‘আইনে আছে, জেলকোডের ৬১৭ ধারায় যে সামাজিক মর্যাদা এবং প্রেসিডেন্স ওয়ারেন্ট (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স-রাষ্ট্রীয় মর্যাদার ক্রমবিন্যাস) অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পরই প্রাইম মিনিস্টারের স্থান। তো বেগম খালেদা জিয়া এক্স-প্রাইম মিনিস্টার। জেল কোডের ৬১৭ অনুযায়ী তিনি ডিভিশন এমনিই পান। আদালত আজ ডিভিশন মঞ্জুর করেন।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেছেন, খালেদা জিয়াকে সব সুযোগ সুবিধা দিয়েই রাখা হয়েছে। আলাদা করে ডিভিশন চেয়ে আবেদনের প্রয়োজন পড়ে না। কাজল বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে বক্তব্য বিভিন্নজন দিচ্ছেন যে ডিভিশন চাচ্ছেন। তিনি তো ডিভিশনের ঊর্ধ্বে জেল কর্তৃপক্ষের নজরে বা সম্মানের সাথে অবস্থান করছেন। এখানে আবার ডিভিশন চাওয়ার কী বিষয়, আমি তো বুঝি না। আরেকটা হলো আসামিদের যে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে সে অর্থগুলি সরকারি কোষাগারে যাতে জমা হয়, আইনেই আছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ ধারায় আছে, এটা জাজমেন্টের মধ্যেও লেখা আছে। সুতরাং সেগুলো কী করে আদায় করা যায় আমি দরখাস্ত দিয়েছি।’

এদিকে অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। গত বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এর পর থেকে তাঁকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি ভবনে রাখা হয়েছে।

একই মামলায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

গতকাল শনিবার ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।

বেরিয়ে এসে মওদুদ আহমদ জেলগেটে গণমাধ্যমকে বলেন, খালেদা জিয়া সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং একটি দলের প্রধান। কিন্তু কোনো ডিভিশন দেওয়া হয়নি। পরিচারিকা ফাতেমাকেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে অখাদ্য খেতে দেওয়া হয়েছে।