স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শিগগিরই সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেবে র‌্যাব।সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই হত্যাকা-ের তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।রোববার সচিবালয়ে ২১ ফেব্র“য়ারি উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী।বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে ডিভিশন দেয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, তার একটি সামাজিক মর্যাদা রয়েছে। একটি বৃহত্তর দলের চেয়ারপারসন তিনি। এসব বিষয় মাথায় রেখেই তাকে কারাগারে ডিভিশনের প্রাপ্ত সব সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

মন্ত্রী জানান, ২১ ফেব্র“য়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনার এলাকায় বিশেষ স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। ওই দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ টহল থাকবে। গোটা শহীদ মিনার এবং আশপাশের এলাকা বিশেষ নজরদারিতে থাকবে।বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।ছয় বছর পার হয়ে গেলেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার কূলকিনারা হয়নি। ঘটনার পর থেকে ৭২ মাসে প্রতিবেদনের সময় পিছিয়েছে ৫৩ বার। এ হত্যাকান্ডের তদন্তভার এখন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের হাতে থাকলেও নতুন করে কোনো ক্লুই বের করতে পারেনি সংস্থাটি।২০১২ সালের ১১ ফেব্র“য়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরের দিন ভোরে তাঁদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় রুনির ভাই বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। মামলার পর রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আটজনকে আটক করা হয়। বাকিরা হলেনÑরফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর, আবু সাঈদ ও বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির।এর মধ্যে পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান জামিনে রয়েছেন।৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের ধরতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ কিংবা তদন্তে ‘প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি’ আছে বলে তৎকালীন পুলিশপ্রধানের মন্তব্য এখন হাস্যরসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এই হত্যাকান্ডের তদন্তভার যাদের হাতে, সেই র‌্যাব নতুন করে কিছুই জানাতে পারছে না।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর হত্যাকান্ডের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ৫৩তম দিন ছিল। র‌্যাব সেদিনও প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় আদালত এই মাসে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ দিয়েছেন।এদিকে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার কারণ জানতে উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ হলে তাদের প্রকাশ্যে তা বলার দাবিও তুলেছেন তারা। রবিবার (১১ ফেব্র“য়ারি) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। অবিলম্বে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা। ডিআরইউ সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ছয় বছরে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলে তদন্ত কর্মকর্তা কেবল সময়ক্ষেপণ করেছেন। কিন্তু তদন্তে কোনও অগ্রগতি নেই। উচ্চ আদালতকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন আমাদের সাংবাদিক নেতারা। আমারও দাবি, উচ্চ আদালত বিভিন্ন বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে। উচ্চ আদালত জানতে চাইতে পারে, কেন তদন্ত সংস্থা ব্যর্থ হচ্ছে।সংগঠনটির সভাপতির প্রশ্ন, কেন আমাদের সিআইডি, ডিবি ও র‌্যাব ব্যর্থ?’ তিনি মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার কারণে সরকারও ব্যর্থ হচ্ছে। তার কথায়, রাষ্ট্রের নাগরিকদের খুনের ঘটনার বিচার হবে না, এটা কোনও কল্যাণ-রাষ্ট্র হতে পারে না।দীর্ঘ সময় পর মানবতাবিরোধী অপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের উদাহরণ টেনে ডিআরইউ’র সভাপতি আশাবাদী কণ্ঠে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর যদি এসব খুনের বিচার হতে পারে, তাহলে সাগর-রুনি হত্যার বিচারও একদিন হবে। তারা কেন কপালে ব্যর্থতার তকমা নিচ্ছেন? আমরা জানতে চাই। যদি র‌্যাব ব্যর্থ হয়ে থাকে, তাহলে অন্য কোনও তদন্ত সংস্থাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হোক।ডিআরইউ’র সভাপতির ভাষ্য, যতদিন বিচার না হবে, আমরা আন্দোলন থেকে সরবো না। আমরা বিচার চেয়েই যাবো। সাগর-রুনি হত্যার বিচার একদিন না একদিন হতেই হবে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শুক্কুর আলী শুভর কণ্ঠেও একই সুর, আমরা বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এখানে কোনও রাজনীতির সুযোগ নেই। আমরা সাংবাদিক দম্পতি হত্যার বিচারের দাবি জানাবোই।এর রেশ ধরে সাগর-রুনি হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে শুরু থেকে ডিআরইউ আন্দোলন করে আসছে বলে জানান সংগঠনটির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা। আগামীতেও একই দাবিতে আন্দোলন করে যেতে চান তারা।জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান মনে করিয়ে দিলেন হত্যাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেফতারে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও আইজিপির আশ্বাস। কিন্তু তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। খুনিরা আজও গ্রেফতার হয়নি। এই সাংবাদিক দম্পতির খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।একই দাবি জানিয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ মনে করেন, সাগর-রুনি হত্যার হত্যা মামলার তদন্ত এখনও শেষ না হওয়া খুবই দুঃখজনক।এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ডিআরইউ’র ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও জাতীয় প্রেসক্লাবের নেতারা।