জমি দেয়ার কথা বলে এক ভক্তের কাছ থেকে আগেই দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন হাসান চিশতীয়া ওরফে জয়গুরু (৬০) নামে এক ভণ্ডপীর। জমি দেয়া তো দূরের কথা এবার ওই ভক্তের স্ত্রীকেই (২৫) নিজের বাড়িতে দীর্ঘদিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগে রোববার রাতে খোলামোড়া জিয়ানগর থেকে ওই ভণ্ডপীরকে গ্রেফতার করেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। ভণ্ডপীরের বিরুদ্ধে সোমবার মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূর বড় ভাই।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার এসআই নুরুল হুদা জানান, অভিযোগ পেয়ে রোববার রাতে জিয়ানগরের নিজ বাড়ি থেকে ভণ্ডপীর হাসান চিশতীয়া ওরফে জয়গুরুকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা যায়, খোলামোড়া এলাকায় হাসান চিশতীয়ার বাড়ির পাশে ভাড়া থাকতেন ওই গৃহবধূ। তার স্বামী তিনি রাজধানীর একটি মার্কেটে কাপড়ের দোকানে সেলসম্যানের কাজ করেন। তিনি হাসান চিশতীয়ার ভক্ত ছিলেন। মাঝে মাঝে পীরের বাড়িতে স্ত্রীকেও নিয়ে যেতেন। ঢাকায় চাকরির সুবাদে তিনি দোকানেই রাতযাপন করতেন। সপ্তাহে একদিন কেরানীগঞ্জে ভাড়া বাসায় আসতেন। তাদের পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।

বেশির ভাগ সময় ইকবাল ঢাকায় থাকার কারণে স্ত্রী ও মেয়েকে ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে তার কাছে থাকতে বলেন হাসান চিশতীয়া। তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে তিন মাস ধরে মেয়েকে নিয়ে পীরের বাড়িতে উঠেন ওই গৃহবধূ। তার স্বামী মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে তাদের দেখতে আসতেন। এরই মধ্যে হাসান চিশতীয়া ওই গৃহবধূকে নানা ধরনের ভয়ভীতি ও প্রলোভন এবং ওষুধ খাইয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ করে ফেলে। একপর্যায়ে ৩১ ডিসেম্বর ওই গৃহবধূকে আদালতের মাধ্যমে স্বামীকে ডিভোর্স নোটিশ পাঠাতে বাধ্য করেন ভণ্ডপীর। নোটিশ পাঠানোর পরদিনই ভণ্ডপীর হাসান চিশতীয়া মেয়ের বয়সী ওই গৃহবধূকে বিয়ে করেন। এরপর গত দেড় মাস ধরে তার উপর যৌন নির্যাতন চালিয়ে আসছে হাসান চিশতীয়া।

এসব বিষয়ে গৃহবধূরবড় ভাই ও মামলার বাদী জানান, গত দুই মাস ধরে বোনেরসঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল না। মোবাইলও বন্ধ পান। বোনেরস্বামীও তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। পরে তারা বোনের খোঁজ নিতে ভণ্ডপীরের বাড়িতে যান। তখন তারা জানতে পারেন, স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে তার বোন হাসান চিশতীয়ার সঙ্গে সংসার করছে। পরে আত্মীয় স্বজনদের সহায়তায় ফারজানাকে ওই বাড়ি থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে তাদের বাসায় নিয়ে যান এবং থানায় গিয়ে অভিযোগ দেন।

এসব বিষয়ে ওই গৃহবধূর স্বামী বলেন, আমার অবর্তমানে স্ত্রীকে কাবু করে ফেলে ওই ভণ্ডপীর। নানা ভয়ভীতি দেখায়। এরপর তাকে বিয়ে করেছে জানিয়ে গত দেড় মাস ধরে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। এখানে আমারও ভুল ছিল। সরল বিশ্বাসে পীরের কাছে স্ত্রীকে রেখে এসেছিলাম। তিনি বলেন, এর আগে ভণ্ডপীর জমি দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু জমি দেননি। উল্টো স্ত্রীর কাছ থেকে তাকে দূরে সরিয়ে অবৈধভাবে মেলামেশা করেছেন।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার এসআই নুরুল হুদা বলেন, আটকের পর ভণ্ডপীর বিয়ের একটি কাবিননামা দেখিয়েছে। কিন্তু ডিভোর্স নোটিশের ৩ মাস অতিবাহিত না হলে ডিভোর্স কার্যকর হয় না। এ অবস্থায় নতুন করে বিয়ে করাও বৈধ নয়। বিয়েটি ছিল অবৈধ। কাজেই ওই নারীর সঙ্গে শারীরিকভাবে মেলামেশা করাও ধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হবে। তিনি আরও জানান, ভণ্ডপীর হাসান চিশতীয়া বিবাহিত এবং দুই মেয়ের জনক। দুজনই বিয়ের উপযুক্ত। তারা এক সঙ্গে ওই বাড়িতে থাকেন। স্ত্রী ও মেয়েদের সঙ্গেই ফারজানাকে বাড়িতে রেখেছিলেন। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যোবায়ের বলেন, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।