প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষা শুরুর সময় ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে রাখার নির্দেশনা থেকে সমালোচনার মুখে সরে এসেছে সরকার। টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি থেকে সোমবার সকালে সব ইন্টারনেট গেটওয়েকে নতুন এক নির্দেশনা পাঠিয়ে বলা হয়েছে, আইএসপি ও মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেটের গতি কমানোর বিষয়ে আগের নির্দেশনা স্থগিত থাকবে।

অবশ্য নতুন এই নির্দেশনা কার্যকরের আগেই সকাল ৮টা থেকে আধা ঘণ্টার মত ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়েছে গ্রাহকদের।এর আগে রোববার রাত ১০টা থেকে আধা ঘণ্টা পরীক্ষামূলকভাবে দেশের সব ইন্টারনেট প্রোভাইডারের ব্যান্ডউইথ সেকেন্ড ২৫ কিলোবিটের মধ্যে সীমিত রাখা হয়।ওই গতিতে কোনো ধরনের যোগাযোগ সম্ভব না হওয়ায় ওই আধা ঘণ্টা ইন্টারনেট কার্যত বন্ধই থাকে। সেই সঙ্গে এসএসসির আগামী সবগুলো পরীক্ষার শুরুতে আড়াই ঘণ্টা ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে রাখতে বলা হয় বিটিআরসির নির্দেশনায়। কোন তারিখে কখন থেকে কখন ইন্টারনেটে গতি কম থাকবে, তার একটি তালিকাও দেওয়া হয়। এদিকে সরকার ইন্টারনেটের গতি নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটায় বিমান চলাচল, আউটসোর্সিং, কল সেন্টার, সংবাদমাধ্যমের কাজসহ সব ধরনের যোগাযোগে বড় ধরনের জটিলতার শঙ্কা তৈরি হয়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও সরকারের এ সিদ্ধান্তের তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। গণজাগরণ মে র মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার রোববার রাতে বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত যারাই নিয়ে থাকুন, ইন্টারনেট সম্পর্কে তাদের নূন্যতম ধারণা আছে কিনা আমার সন্দেহ হয়। প্রশ্নপত্র যে ফাঁস হয় সেটা ইন্টারনেটে হয় না। আগে ফাঁস হয় তারপর ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়ায়। ফাঁস হওয়া বন্ধ করতে হবে আগে।তার বিশ্বাস, এ ধরনের পদক্ষেপ প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে কোনো কাজে আসবে না, সেজন্য যেতে হবে গোড়ায়।

ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের (বোয়ান) আহ্বায়ক ইমরান বলেন, প্রশ্নপত্র ছড়ানোর পেছনে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এটা ইতিবাচক। কিন্তু এদের পেছনে কারা, কারা প্রশ্নপত্রটা ফাঁস করল- সেই অপকর্মকারীদের ধরার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে আমরা দেখছি না।”ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক রাখতে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সোমবার সকালে নতুন এই নির্দেশনাটি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়েকে (আইআইজি) মেইল করা হয়েছে।বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আমিন যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি জানান, ইন্টারনেট ধীরগতি করার নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত ইন্টারনেটের গতি আগের মতোই স্বাভাবিক থাকবে।এর আগে ইন্টারনেট ধীরগতি করার মহড়া দেয়ার জন্য রোববার রাত ১০টা থেকে আধা ঘণ্টার জন্য আইএসপি, ওয়াইম্যাক্স ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের ইন্টারনেট গতি কমিয়ে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়।বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আমিন স্বাক্ষরিত এক পত্রে সকল ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়েকে (আইআইজি) এই নির্দেশনা দেয়।ইন্টারনেট ধীরগতি করার মহড়া দেয়ার জন্য আধা ঘণ্টার জন্য আইএসপি, ওয়াইম্যাক্স ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের ইন্টারনেট গতি কমিয়ে রাখার কথা বলা হয়।এসএসসি পরীক্ষার দিনগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধ করতে সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা ধীরগতি রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ধীরগতির পরিমাণ এমন স্তরে রাখা হয় সেটিকে ইন্টারনেট বন্ধ বলেই উল্লেখ করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এ সিদ্ধান্তের ফলে অ্যাভিয়েশন খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাই আজ ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক করা নির্দেশনা দেয়া হয়।বিটিআরসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু সময় ইন্টারনেটের গতি ২৫ কিলোবাইট পার সেকেন্ড (কেবিপিএস) করা হয়েছিল। এ নির্দেশনার ফলে আইএসপি, ওয়াইম্যাক্স ও মোবাইল ইন্টারনেটসহ সব ধরনের ইন্টারনেট ধীরগতি হয়ে যায়।এর আগে রোববার সকালে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর সময় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত শুধু মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। তবে বিটিআরসির পক্ষ থেকে এক ঘণ্টা মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখতে বললেও সাড়ে ৯টা থেকে ৩০ মিনিটের জন্য এ সেবা বন্ধ ছিল।এই সময়ের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবায় কোনো বিঘœ না ঘটলেও পরের নির্দেশনায় সব ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১২, ১৩, ১৫, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২২ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষার দিন সকালে দেড় ঘণ্টা এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা থেকেও দেড় ঘণ্টা ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে রাখতে বলা হয়।তবে ইন্টারনেটের গতি কমানোর বিষয়টির সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন লার্ন এশিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র পলিসি ফেলো ও টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ খান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, পরীক্ষারপ্রশ্নপত্র তৈরি করে সরকার, ছাপায় সরকার এবং সরবরাহ করে সরকার। এখানে বেসরকারি খাতের কারও কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সুতরাং পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ফাঁসের এককভাবে সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারের। সরকার এখানে ব্যর্থ হলে উদর পি-ি বুদুর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হবে। এখানে ইন্টারনেট বন্ধ করার প্রশ্ন কেন আসছে? তা হলে সারা দেশে কারফিউ জারি করা উচিত। সান্ধ্য আইন জারি করে সব কিছুই বন্ধ রাখা উচিত।