চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা তদন্ত ও রোধে দুটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় একটি রিট আবেদনের শুনানিতে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই কমিটি গঠন করেন।

দুটি কমিটির মধ্যে প্রশাসনিক কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ। আর ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বিচারিক তদন্ত কমিটি। প্রত্যেক কমিটির সদস্যসংখ্যা পাঁচজন করে।এর আগে একই বেঞ্চ প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। শিক্ষাসচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব, আইনসচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং উইংয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, তথ্যপ্রযুক্তিসচিব, বিটিআরসির সচিব-চেয়ারম্যান, বিটিসিএল প্রধান, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক-চেয়ারম্যান, ঢাকা-রাজশাহী, কুমিল্লা-যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল সিলেট, দিনাজপুর উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দিতে হবে।

এর আগে গত বুধবার (১৪ ফেব্র“য়ারি) প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন যুক্ত করে এসএসসি পরীক্ষা বাতিল এবং নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, সিকদার মাহমুদুর রাজি, মো. রাজু মিয়া ও নূর মোহাম্মদ আজমী।আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান।রিটকারীর আইনজীবী ছিলেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিচারিক তদন্ত কমিটি প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে কারা জড়িত খুঁজে বের করবেন। আর প্রশাসনিক কমিটি প্রশ্নফাঁস প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নির্ধারণ করবেন। তিনি বলেন, দুটি কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

রুলের জবাব দুই সপ্তাহের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে শিক্ষাসচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব, আইনসচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং উইংয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, তথ্যপ্রযুক্তিসচিব, বিটিআরসির সচিব-চেয়ারম্যান, বিটিসিএল প্রধান, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক-চেয়ারম্যান, ঢাকা-রাজশাহী, কুমিল্লা-যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল সিলেট, দিনাজপুর উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে।

পরে ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, বিচারিক কমিটির কাজ হবে কারা জড়িত এবং কি কি ভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে, কার কার মাধ্যমে, কোন মাধ্যমে ফাঁস হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করবে এবং সেটার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকলে সেক্ষেত্রে কি ব্যাবস্থা নেওয়া উচিত সে বিষয়ে পরামর্শ দেবে। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃতে কমিটিতে থাকবেন নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আইন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন করে ডেপুটি সেক্রেটারি।

অন্যদিকে প্রশ্নফাঁস কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়, পাবলিক পরীক্ষায় ভবিষ্যতে যেন আর এমন ঘটনা না ঘটে, কি পদ্ধতি অনুসরণ করলে এটা হবে না, সে বিষয়ে পরামর্শ করবেন প্রশাসনিক কমিটি। বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে এই কমিটিতে থাকবেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সোহেল রহমান, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরেরে ডিজি, কম্পিউটার সোসাইটির একজন আইটি স্পেশালিস্ট এবং সিআইডির ডিআইজি পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা।এর আগে সকালে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পরও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১ ফেব্র“য়ারি বাংলা প্রথম পত্রের বহুনির্বচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেট পরীক্ষার প্রশ্ন ও ফেসবুকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল ছিল। পরীক্ষা শুরুর একঘণ্টা আগেই তা ফেসবুকে পাওয়া যায়। ৩ ফেব্র“য়ারি সকালে পরীক্ষা শুরুর প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বচনি) অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় ফেসবুকে। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

৫ ফেব্র“য়ারি পরীক্ষা শুরুর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৪ মিনিটে ইংরেজি প্রথম পত্রের ‘ক’ সেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। ৭ ফেব্র“য়ারি বুধবার পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৪৮ মিনিট আগে সকাল ৯টা ১২ মিনিটে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের ‘খ’ সেটের গাঁদা প্রশ্নপত্রটি হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্র“পে পাওয়া গেছে। যা অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বহুনির্বচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেটের চাঁপা প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়। এটিও অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে।

গত ১০ ফেব্র“য়ারি সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্র“পে গণিতের ‘খ-চাঁপা’ সেটের প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়, যা অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। গত ১১ ফেব্র“য়ারি সকাল ৮টা ৫১ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে আইসিটি বিষয়ের ‘ক সেট’ প্রশ্ন পাওয়া যায়। আর সকাল ৯টা ৩ মিনিটে ‘গ সেট’র প্রশ্নও ফাঁস হয়। এছাড়া গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পদার্থবিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের পরীক্ষা শুরুর আগেই হোয়াটসঅ্যাপে পদার্থবিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিংয়ের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে।