প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,আওয়ামী লীগ আপনাদের জন্য উন্নয়ন নিয়ে আসে আর বিএনপি-জামায়াত উপহার দেয় লাশ।তিনি বলেন, আগামীতে নির্বাচন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ডিসেম্বরে।সেই নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচন, প্রত্যেক নির্বাচনে আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।

বৃহস্পতিবার রাজশাহী সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপস্থিত জনতার কাছে আওয়ামী লীগের জন্য ভোট চান।প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীবাসীর কাছ থেকে নৌকায় ভোট পেতে হাত তুলে ওয়াদা আদায় করে বলেন, আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি, সেই উন্নয়ন যাতে অব্যাহত থাকে, মানুষ যেন খেয়ে-পরে শান্তিতে থাকে, তার জন্য আমি আপনাদের কাছে আবেদন করি। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ আমাদের দিন। আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন নৌকায় ভোট দেবেন। আমরা দেশকে উন্নত করবো, সমৃদ্ধশালী করবো। ক্ষুধামুক্ত করবো।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সময় রাজশাহী ছিল সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের এলাকা। তারা তৈরি করেছিল বাংলা ভাই। বিএনপি-জামায়াতের সময় বিভিন্ন হামলার শিকার হয়েছে রাজশাহীর মানুষ।তিনি বলেন, বিএনপি চোরের জন্য আন্দোলন করছে, খালেদা জিয়ার দুই ছেলের দুর্নীতিও এখন প্রমাণিত।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আমলে মানুষ অভয়ে চলতে পারত না, ঘর থেকে বের হতে পারত না। রাজশাহীকে তারা ত্রাসের নগরীতে পরিণত করেছিল। তারা দেশের উন্নয়ন করতে পারেনি, করেছে বোমাবাজি।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া গ্রেফতার হয়েছে। কারণ, ৯১ সালে এতিমখানা তৈরি করবে বলে বিদেশ থেকে টাকা এনেছে। কিন্তু এতিমখানা কই? কেউ ঠিকানা জানে না। শেখ হাসিনা বলেন, সেই টাকা লুটপাট করে খেয়েছে। এখন বলে টাকা তো আছে, টাকা তো বেড়েছে। কিন্তু এই টাকা কে ভোগ করেছে?’।

এ সময় তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতারা আন্দোলন করে। কিসের আন্দোলন? টাকা চুরি করে নেত্রী জেলে গেছে। আন্দোলন চোরের জন্য? এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছে। ২৭ বছর এতিমের ভাগ এতিমকে দিতে পারেনি। সে টাকা নিজের কাছে রেখে গিয়েছে।বিএনপি সরকার আমলে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। শিবির ক্যাডাররা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। বিএনপির সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কীভাবে মানুষ কষ্ট করেছে আমরা দেখেছি। এই রাজশাহীতে তারা আপনাদের দিয়েছিল লাশের উপহার।এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, নুহ নবীর (সা.) আমল থেকে রক্ষা করেছে নৌকা। নৌকা আপনাদের মার্কা। এই নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ বাংলা ভাষা পেয়েছে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলে দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীন না হলে আজ এত উন্নয়ন হতো না।

তিনি বলেন, রাজশাহীতে মেয়র পদে নির্বাচিত হতে না পারলেও আমরা উন্নয়ন বন্ধ করে দিইনি। উন্নয়ন প্রকল্পে টাকা আমরা দিয়েছি, তারা (বিএনপি) সেই টাকা মেরে খেয়েছে।রাজশাহীবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমরা আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসেছি। বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে এসেছি । শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি বলে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। প্রতিরাতে কারফিউ দিয়ে তিনি গণতন্ত্র চালিয়েছেন। খুনি যুদ্ধাপরাধীদের দল করতে দেওয়াটাই হচ্ছে জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র।এর আগে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।চলতি মেয়াদে এটি প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহীতে দ্বিতীয় সফর।আটটি নতুন থানাসহ রাজশাহীতে ২১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৩টি প্রকল্পের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত নয় বছরে রাজশাহীতে শেখ হাসিনার প ম সফর এটি। এ উপলক্ষে রাজশাহী শহর সাজানো হয় মনোরম সাজে।নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর বিকালে রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে জনসভাস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।উদ্বোধন হওয়া আটটি নতুন থানা হল- রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানা, কাশিয়াডাঙ্গা থানা, কাটাখালী থানা, এয়ারপোর্ট থানা, পবা থানা, কর্ণহার থানা, দামকুড়া থানা ও বেলপুকুর থানা।

এছাড়া বোয়ালিয়ায় বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন ও শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ডিগ্রি কলেজের পাঁচতলা অ্যাকাডেমিক ভবন, পবায় দামকুড়া হাট কলেজের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন, বাঘায় আড়ানী ডিগ্রি কলেজের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন, তানোরে আব্দুল করিম সরকার ডিগ্রি কলেজের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন, বাগমারা কলেজের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন, পুঠিয়ায় বিড়ালদহ কলেজের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।পুঠিয়া উপজেলায় বারনই নদীতে রাবার ড্যাম, রাজশাহী (নর্থ) ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, রাজশাহী নওহাটা ফায়ার স্টেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইন্সটিটিউট, গোদাগাড়ী উপজেলার সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন ও হল রুম এবং রাজশাহী বিভাগীয় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের ছয়তলা ছাত্রীনিবাস, কাশিয়াডাঙ্গা ৩৩/১১ কেভি ২ ১০/১৩.৩৩ এমভিএ উপকেন্দ্র, মহেরচন্ডী ৩৩/১১ কেভি ২ ১০/১৩.৩৩ এমভিএ উপকেন্দ্র, রাজশাহী-নওগাঁ প্রধান সড়ক থেকে মোহনপুর রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়কে ৩২৪ দশমিক ৫০ মিটার ফ্লাইওভার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, চারঘাট উপজেলার কৃষ্ণপুর থেকে জাহাঙ্গীরাবাদ সড়কে ৯৬ মিটার গার্ডার ব্রিজ, গোদাগাড়ী উপজেলার বড়গাছি ও রাজাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিস, চারঘাট উপজেলার চারঘাট ও নন্দনগাছি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, দূর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং বেসরকারি শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা।