নওগাঁর রাণীনগর রেল ষ্টেশনে ওভার ব্রীজের সংস্কার না হওয়ায় একে একে লম্বা হচ্ছে এই লাশের মিছিল। গত ৩ মাসে ওভার ব্রীজের সাথে ধাক্কায় লেগে ট্রেন থেকে ছিটকে পরে ৭ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে ।

গত বুধবার ১ম প্রহর রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দিনাজপুরগামী আন্তঃনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি নওগাঁর রাণীনগর ষ্টেশন অতিক্রম করছিল। এসময় ওই ট্রেনের ছাদে থাকা যাত্রীদের মধ্যে ৭জন প্লাটফর্মের ওভার ব্রীজের সাথে ধাক্কা খায়। এতে ছাদ থেকে ছিটকে পরে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত এবং ওই দিন বিকেলে রাজশাহী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো একজন মারা যায় । নিহতরা হলেন, দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার বড় হামিদপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মো. জাহাঙ্গির আলম (২০), নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলার মালিপুর গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে আমিনুল হোসেন ওরফে বুলবূল (২৯), প গড় জেলার বোদা উপজেলার তিতোপাড়া গ্রামের রমজান আলীর ছেলে আপেল মাহামুদ(২৬) এবং দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার চৈতাপাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দীনের ছেলে মুনিরুজ্জামান (২০)। এছাড়া জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার মকিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ (৩০), নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজেন্দ্রপুর গ্রামের মেহেদী হাসান (৩০),নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার বারইসা গ্রামের মোতালেব হোসেন (৩০) আহত হয়। আহত ৩ জনকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় । এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল নাগাদ আরিফ হোসেন নামের আরো এক যাত্রী মারা যায় বলে জানাগেছে। নিহতদের লাশের সুরতহাল প্রস্তুতকারী সান্তাহার জি,এর,পি থানার এস,আই ইমায়েদুল জাহেদী জানান,নিহতদের প্রত্যেকের মাথায় গুরুত্বর জখম হয়েছে। তারা সবাই ছুটি কাটাতে ঢাকা থেকে বাড়ীতে ফিরছিল। নিহতদের মধ্যে কেউ কলেজ ছাত্র ,কেউ গার্মেনটস কর্র্মী বলে জানান তিনি ।

সংশ্লিষ্ঠ সুত্র মতে, প্রতিটি ওভার ব্রীজ প্রায় ১৭ ফিট থেকে সাড়ে ১৭ ফিট উঁচু হয় । গত দু’বছর আগে এবং সম্প্রতি রেলের পাটাতন উঁচু করলেও রাণীনগর ওভার ব্রীজটির উচ্চতা না বাড়ানোর কারণে বর্তমানে ব্রীজের উচ্চতা ১৫ ফিট ৩ ইি তে নেমে এসেছে । পাশা-পাশি আগের তুলনায় বর্তমানের রেলের বগিগুলো প্রায় এক ফুট বেশি উঁচু হওয়ায় ট্রেনের ছাদে অবৈধ ভাবে ভ্রমনকারী যাত্রীরা এই হতাহতের শিকার হচ্ছেন।

দূর্ঘটনার পর সান্তাহার জংশন স্টেশনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কর্মার্শিয়াল (টিআইসি) মোঃ আব্দুস সোবহান বুধবার সকালে রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন করেছেন । এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, গত দুই বছর আগে রেল-লাইন প্রায় দুই ফুট উচু করনের কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশনের ওভার ব্রীজটি একটু নিচু হওয়ায় বিশেষ করে ট্রেনের ছাদে অবৈধ ভাবে ভ্রমনকারী যাত্রীরা ওইখানে প্রায়ই দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। তিনি রেলওয়ের উধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে রাণীনগর রেলস্টেশনের ওভারব্রীজটি উঁচুকরনের জন্য সুপারিশ করবেন বলে জানান।

এব্যাপারে নিরাপদ সড়ক চাই রাণীনগর উপজেলা শাখা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পাভেল রহমান জানান, রেল লাইনের পাটাতন উঁচু করলেও একই তালে ওভার ব্রীজটির উচ্চতা না বাড়ানোর ফলে প্রতিনিয়ত হতাহতের ঘটনা ঘটছে । তিনি দ্রুতম সময়ের মধ্যে ব্রীজটি সংস্কারের দাবি জানান।

এব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব জানান, দূর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ঠ নির্দেশনা মতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ব্রীজটির উচ্চতা কম হওয়ায় এমন দূর্ঘটনা ঘটছে । খুব শীঘ্রয় ব্রীজটির উচ্চতা যেন বাড়ানো হয় এমন সুপারিশ করে কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন দিয়েছি । আসা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই ব্রীজটি সংস্কারের মাধ্যমে যাত্রীরা হতাহতের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
পাকশি বিভাগীয় রেলওয়ে পরিবহন কর্মকর্তা শওকত জামিল জানান,ইতি মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জ্বোর প্রস্তুতি চলছে । অল্প সময়ে ব্রীজটি সংস্কারের মাধ্যমে আরো উঁচু করে সমস্যা সমাধান করা হবে।