তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, যারা ভূমিদস্যু তারা অন্যদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে অভ্যস্ত হয়ে যান। একসময়ে হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করা শেষ হলে তারা প্রমোশন পেয়ে অন্যদের সম্পত্তিতে হাত বাড়ায়। কারণ, লুটেরার হাত কখনও থামতে জানে না। শাস্তি না দেওয়া হলে তাদের থামানো সম্ভব নয়।

শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের জনবিরোধী বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগের প্রতিবাদ এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন জাতীয় নাগরিক সমন্বয় সেলভুক্ত কয়েকটি সংগঠন এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।অর্পিত সম্পত্তিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিধান রেখে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইন”র বিধি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকারÑএমন অভিযোগ এনেছে দেশের ৯টি মানবাধিকার সংগঠন।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত।

সেমিনারে আসা বক্তারা জানান, যে উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০১ সালের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল তার বাস্তবায়ন না করে উল্টো রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওই সম্পত্তি প্রাপ্তির বিধি প্রণয়ন, নতুন করে সম্পত্তি আত্মসাতের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন মানবাধিকার কর্মীরা।

ওই খসড়া বিধিমালা বাতিলের সুপারিশ করেন তারাÑ না হলে আবারও আন্দোলনে যাবার ঘোষণা দেন।বিগত ২০০১ সালে প্রণীত অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইনে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে সংশোধন করা হয় ২০১৩ সালে। ক্ষতিগ্রস্তদের নানা আন্দোলনের মুখে আইন বাস্তবায়নের কিছু উদ্যোগ সরকার নিলেও তা পুরোপুরি আলোর মুখ দেখেনি। এবার সেই আইনের অধীনে বিধিমালা তৈরি হচ্ছে। সে খসড়া বিধিমালায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অর্পিত সম্পত্তি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এরই মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সমন্বয়ে গঠিত সমবায় সমিতির বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণে এমন জমি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছেন দেশের এমন নয়টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই বিধি ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকার পরিপন্থি বলে অভিযোগ এনেছে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের মতামত তুলে ধরেন।আইন বাস্তবায়নে সরকারের কালক্ষেপণ এবং এই বিধি প্রণয়নের সমালোচনা করে সুব্রত-খুশি কবির বলেন, আইন বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছার অভাব স্পস্ট।সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাম্পদ্রায়িক বলে উল্লেখ করেছেন মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

তিনি বলেন, সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না এলে আবারও ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকার আদায়ে আবারো আন্দোলনে যাবেন তারা।ওই বিধিমালাকে জনস্বার্থ বিরোধী উল্লেখ করে, তা অবিলম্বে সংশোধন, পূর্বে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা কার্যকর করাসহ আট দফা দাবি তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বক্তব্য উল্লেখ করে সুলতানা কামাল বলেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন অনেক কিছুই করা যায় না, কারণ পাকিস্তানি মনোভাবের লোকজন দেশে রয়ে গেছে। সংস্কৃতির অনেক কিছুই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না।আমাদের অনুরোধ তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যেন চারদিকে তাকিয়ে দেখেন কাদের মধ্যে পাকিস্তানি, সাম্প্রদায়িক মনোভাব রয়ে গেছে।তিনি বলেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ শুধু যে হিন্দু সংখ্যালঘুদের সমস্যা, এমন নয়। হিন্দুরা যে অবস্থানে আছে সেখান থেকে তাদের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাই যারা অন্যদের সম্পত্তি লুট করে তাদের থামানো প্রয়োজন। কিছু মানুষ সমস্ত মানুষের সম্পদ অপহরণ করে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছেন বলেও অভিযোগ করেন সুলতানা কামাল।সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন- খুশি কবীর, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, শামসুল হুদা ও অ্যাডভোকেট তবারক হোসাইন প্রমুখ।