নীলফামারীতে ৩৭তম জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ‘উড়িয়ে ধ্বজা অগ্রভেদী রথে, ওই যে তিনি ওই যে বাহির পথে’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বোধনসঙ্গীত ও মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার(৯ই মার্চ) সন্ধ্যায় নীলফামারী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তিন দিনের এই সম্মেলন শুরু হয়। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, “যে জাতির রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধু আছে সে জাতির ভয়ের কোনো কারণ নাই। আমাদের পরাজিত হবার কোনো সুযোগ নাই। বিজয় আমাদের হবেই।

“রবীন্দ্রচেতনা সর্বদাই আমাদের দেশপ্রেম ও অসাম্প্রদায়িক হবার অনুপ্রেরণা। একই সঙ্গে তিনি আমাদের চিন্তার গভীরে সর্বদাই বাতিঘর হয়ে বিশ্বমানব হবার শক্তি যোগান।”

সম্মেলনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাশাপাশি নজরুলের গান, নৃত্য, লোকসঙ্গীত পরিবেশিত হবে। সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, “এত বড় উৎসব এর আগে নীলফামারীতে আর দ্বিতীয়টি হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না। আগামীতে আমরা আর কবে এত বড় উৎসব নীলফামারীতে করতে পারব তাও জানি না। “এই উৎসব করতে গিয়ে আমরা যে সত্যটির মুখোমুখি হয়েছি তা হল, বাংলাদেশের মানুষ, নীলফামারীর মানুষ মনে-প্রাণে বাঙ্গালি।  এই উৎসব বাঙালির চেতনার উৎসব।

মন্ত্রী বলেন, “যে চেতনা আমরা ধারণ করছি হাজার বছর ধরে, আমাদের সংস্কৃতির ধারা, ঐতিহ্যের ধারাটিকে পরিপুষ্ট করছি। আমাদের নিত্যদিনের কাজ দিয়ে, অভিজ্ঞতা দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে সেটি আমরা ধরে নিয়ে অগ্রসর হতে চাই।”
জাতীয় রবীন্দ্র সম্মেলন পরিষদের সভাপতি সনজীদা খাতুন, সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যসচিব মুজিবুল হাসান চৌধুরী, নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুজার রহমান অনুষ্ঠানে ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে সনজিদা খাতুন বলেন, “রবীন্দ্রনাথ আমাদের বলেছেন মানুষ হতে। কিন্তু আমরা তো মানুষ নেই। আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলেছি। বেশির ভাগ মানুষ এখন মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছে। মানুষ হয়ে জন্মালেই কি মানুষ হওয়া যায়?
“মানুষ হতে হয় সাধনা করে। মানুষের যত গুণ সেই গুণের দিকে দিনে দিনে এগিয়ে যেতে হয়। সংস্কৃতি আমাদের সেই পথ দেখায়। আমাদের দূরের দিগন্ত আমাদের হাতছানি দিয়ে বলে, ‘চলে এসো, এগিয়ে এসো, এসো সেই তীর্থে। যেখানে মানবতার শিশু জন্ম নেবে’।”

উদ্বোধনী পর্বে ঢাকা রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন পরিষদ ও নীলফামারী রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন পরিষদের শিল্পিরা সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। সম্মেলন ঘিরে শহর সাজানো হয়েছে নতুনরূপে। শহরের বিভিন্ন দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলামসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ছবির পাশাপাশি স্বাধীনতা যুদ্ধ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য, বিভিন্ন পশুপাখিসহ প্রাকৃতিক নানা দৃশ্য। এসব ছবি এঁকেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে চারুকলা বিভাগের ১৫ জন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮৮ জন খুদে শিল্পী। শহর ও গ্রামগঞ্জে মাইকে চালানো হচ্ছে ব্যাপক প্রচারণা।

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নীলফামারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দেবীপ্রসাদ রায় বলেন, “তিন দিনব্যাপী জাতীয় এই সম্মেলনে দেশের ৮৪টি রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের আট শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছেন। প্রায় ১০ হাজার মানুষ এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।” সম্মেলন ঘিরে শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সদর থানার ওসি বাবুল আকতার বলেন, আইন-শৃঙ্খলার দিকে বিশষ নজর রাখা হচ্ছে। সম্মেলনস্থল সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আয়োজক কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা শৃঙ্খলা রক্ষার কজ করছে। কাজ করছে সাদা পোশাকের পুলিশও। সম্মেলনস্থল ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।

মহিনুল ইসলাম সুজন,বিশেষ প্রতিনিধি।