ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন তার দুই সন্তান রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। গতকাল-সিঙ্গাপুরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের অ্যালামনাইদের সঙ্গে আলাপকালে রাহুল গান্ধী এ কথা জানান। কংগ্রেস প্রধান রাহুল গান্ধী জানান, অনেক বছর বাবার খুন নিয়ে কষ্ট পাওয়ার ক্ষোভ থাকলেও এখন তারা দুই ভাই বোনই খুনিদের ক্ষমা করেছেন।

রাহুল বলেন, হিংসা পছন্দ করেন না বলেই তারা খুনের নির্দেশদাতা এলটিটি প্রধান প্রভাকরণের মৃত্যুতেও কষ্ট পেয়েছেন। ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি শ্রীলঙ্কায় তামিল স্বাধীনতাকামী সংগঠন এলটিটির সশস্ত্র বিদ্রোহ জোরালো হয়। দলীয় প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ তখন জঙ্গলে সরকারবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমনই এক সময় ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে পরাজিত কংগ্রেস প্রধান রাজীব সাক্ষাৎকারে অঙ্গীকার করেন, পুনর্নির্বাচিত হলে তিনি আবারও ভারতীয় শান্তিরক্ষী পাঠিয়ে শ্রীলঙ্কার তামিল বিদ্রোহীদের দমন করার চেষ্টা করবেন। ৮৪ থেকে ৮৯ সাল পর্যন্ত সরকারে থাকাকালে তিনি ভারতীয় বাহিনী পাঠিয়ে শ্রীলঙ্কার এলটিটি বিদ্রোহীদের দমনের চেষ্টা করেছিলেন। বলা হয়, রাজীবের আবারও সেনা পাঠিয়ে বিদ্রোহ দমন ঠেকাতেই তাকে হত্যার নির্দেশ দেন এলটিটি প্রধান প্রভাকরণ।

রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘আমরা জানতাম বাবা নিহত হবেন। আমরা জানতাম আমার ঠাকুমা নিহত হবেন। রাজনীতিতে অন্যায় শক্তির সঙ্গে লড়াই করলে আপনাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। এটা স্পষ্ট। অনেক বছর ধরে আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমরা খুবই ক্ষুব্ধ ছিলাম। কিন্তু আমি ও প্রিয়াঙ্কা তাদের পুরোপুরি ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি কোনও রকম হিংসা পছন্দ করি না।’ ১৯৯১ সালের ২১শে মে দক্ষিণ ভারতে এক নারী এলটিটি কর্মীর আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন রাজীব। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার সময় তাঁর ওপর এক তামিল গেরিলা এই আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়।

২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা সরকার এক ঘোষণায় জানায়, অবশেষে তারা বিদ্রোহী তামিল সংগঠন এলটিটির প্রধান প্রভাকরণকে হত্যা করতে সমর্থ হয়েছে। জাতিসংঘের ধারণা মতে, ততদিনে শ্রীলঙ্কা সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহী এই সংগঠনের দ্বন্দ্বের বলি হয়েছেন ৮০ হাজার থেকে এক লাখ এলটিটি সদস্য। রাহুল গান্ধী বলেন, ‘রাজনীতিতে এমন কিছু শক্তি রয়েছে যা দেখা যায় না। কিন্তু তারা বেশ ক্ষমতাবান। আর সেই শক্তিগুলোর সঙ্গেই লড়াই করতে হয়।’ ভারতের কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের কারণ যাই হোক, আমি কোনও ধরনের সহিংসতা পছন্দ করি না।’

রাহুল গান্ধী বলেন, ঠাকুরমা আমাকে বলেছেন তিনি মৃত্যুর পথে হাঁটছেন। বাবাও একই কথা বলেছেন। কংগ্রেস নেতা বলেন, টিভিতে প্রভাকরণের (রাজীব গান্ধীর খুনি) মৃত্যুর খবর দেখে দুটি বিষয় অনুভব করলাম। প্রথমত মনে হলো, কেন তারা লোকটিকে এভাবে অপমানিত করছে। দ্বিতীয়ত, প্রভাকরণ ও তার সন্তানদের জন্য আমার আসলেই খারাপ লাগছিল।

১৯৮৪ সালের অক্টোবরে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে খুন হন ইন্দিরা গান্ধী। অথচ একসময় ছোট রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে ব্যাডমিন্টনও খেলতো এই খুনিরা।

রাহুল গান্ধী বলেন, ঠাকুরমা নিহতের সময় আমার বয়স ছিল ১৪ বছর। ঠাকুরমাকে যারা হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে আমি ব্যাডমিন্টন খেলতে অভ্যস্ত ছিলাম। এরপর বাবা খুন হলেন। ফলে আপনি বিশেষ পরিবেশে থাকবেন…, আমি মনে করি সকাল, দুপুর, রাতে ১৫ জন দ্বারা বেষ্টিত হয়ে থাকা কোনও বিশেষ সুবিধা নয়। আমার মনে হয়, এর মোকাবিলা করা খুব কঠিন বিষয়।