পাঁচ বছরের কারাদন্ড প্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া চার মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের ওপর শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে।মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত এ আদেশ দেন। বুধবার (১৪ মার্চ) আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে। মঙ্গলবার সকালে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া চার মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।এ আবেদন দাখিলের বিষয়টি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাডভোকেট (অন রেকর্ড) সুফিয়া খাতুন।আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান। খালেদার পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন।

পরে জয়নুল আবেদীন বলেন, আদালত দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবদেনে স্থগিতাদেশ না দিয়ে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বুধবার এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে।গত ৮ ফেব্র“য়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে এতিমখানা দুর্নীতি মামলার রায়ের পর থেকে গত ৩২ দিন ধরে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।নিম্ন আদালত থেকে ওই মামলার নথি হাই কোর্টে আসার পর তা দেখে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার তাকে চার মাসের জামিন দেয়। সেই সঙ্গে তার আপিল শুনানির জন্য ওই সময়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে পেপারবুক তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপিল শুনানি শুরুর আদেশ চাইলেও হাই কোর্ট চারটি যুক্তিতে জামিন মঞ্জুর করে।

এগুলো হল- ১. নিম্ন আদালত পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছে, এই সাজায় হাই কোর্টে জামিনের রেওয়াজ আছে। সে বিবেচনায় তিনি জামিন পেতে পারেন। ২. বিচারিক আদালতের নথি এসেছে, কিন্তু আপিল শুনানির জন্য এখনও প্রস্তুত হয়নি। ফলে আসামি জামিনের সুবিধা পেতে পারেন। ৩. বিচারিক আদালতে মামলা চলাকালে খালেদা জিয়া জামিনে ছিলেন; এর অপব্যবহার করেননি। আদালতে নিয়মিত উপস্থিত ছিলেন। ৪. বয়স এবং বয়সজনিত শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় নিয়ে তাকে জামিন দেওয়া যায়।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম সোমবারই বলেছিলেন, তারা হাই কোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে যাবেন। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার তারা আলাদাভাবে আবেদন করেন। কিন্তু চেম্বার আদালতের সাড়া না পাওয়ায় এখন তাদের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

রোববার (১১ মার্চ) জামিনের বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য থাকলেও মামলার নথি উচ্চ আদালতে না পৌঁছায় তা একদিন পিছিয়ে সোমবার দিন ধার্য করা হয়। ওইদিন দুপুরে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার চার মাসের জামিনের আদেশ দেন। গত ২২ ফেব্র“য়ারি বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদার আইনজীবীদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। সেদিন খালেদার জরিমানা স্থগিত করে বিচারিক আদালতের নথি ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে পাঠানোর আদেশ দেন।এরপর জামিন আবেদনের শুনানি শেষে ২৫ ফেব্র“য়ারি এক আদেশে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের যে নথি ১৫ দিনের মধ্যে চাওয়া হয়েছে; সে নথি আসার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর আদেশের সময় নির্ধারণ করেছিলেন।এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (৮ মার্চ) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে নথি নিয়ে আদালতের আদেশের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে খালেদার আইনজীবীরা একটি মেনশন স্লিপসহ আবেদন উপস্থাপন করেন। গত ৮ ফেব্র“য়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান মামলাটিতে খালেদা জিয়ার ৫ বছর কারাদন্ড দেন। একই সঙ্গে খালেদাপুত্র ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে দন্ড দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার ১১দিন পর ১৯ ফেব্র“য়ারি বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি বা অনুলিপি হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্র“য়ারি এ আবেদন দায়ের করেন। সাজা ঘোষণার পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।