দুর্গম আর সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েকশত শিক্ষার্থীর জন রয়েছে ২-৩জন শিক্ষক। আবার সুবিধাজনক এলাকায় ছাত্রছাত্রী তেমন একটা না থাকলেও বিদ্যালয়ে রয়েছে শিক্ষক শিক্ষিকার ভীর। এভাবেই চলেছে লালমনিরহাট জেলার ৫টি অপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। এসব হচ্ছে রাজনৈতিক লবিং আর অর্থের জোড়ে। এ যেন দেখেও দেখার কেউ নেই।

এমনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হলো নায়েকগড়টারী বাবর আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেটি লালনিরহাট জেলা সদর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে লালমনিরহাট- বুড়িমারী মহাসড়ক পাশে সাপ্টিবাড়ী এলাকায় অবস্থিত।
বিদ্যালয়টিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৫০ জন হলেও সেখানে কর্মরত শিক্ষক রয়েছেন ৭ জন। অথচ উপজেলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫শতাধিক ছাত্রছাত্রীর থাকলেও সেখানে রয়েছে শিক্ষক সংকট। বিষয়টি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানা থাকলেও টনক নড়েনি কারো।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, জেলা সদর থেকে কাছাকাছি আর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় অনেকেই এ প্রতিষ্ঠানে আসতে আগ্রহী। আবার অনেকেই রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ডেপুটেশনে রয়েছেন সেখানে। এর মধ্যে ৩ জন শিক্ষক ২০১৪ সাল থেকে ডেপুটেশনে রয়েছেন সেখানে। ডেপুটেশনে থাকা শিক্ষকরা হলেন, মিজানুর রহমান মানিক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক), সহকারী শিক্ষক ফেরদৌসি খাতুন ও মোছাঃ মুন্নী খাতুন। আবার একই প্রতিষ্ঠানে ৪ জন শিক্ষক স্থায়ীভাবে কর্মরত রয়েছেন।

১৩ মার্চ সকালে সরেজমিন উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে উপজেলার সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নের নায়েকগড়টারী বাবর আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা গেছে, প্রথম শ্রেনীতে উপস্থিত আছেন ১০ জন শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় শ্রেনীতে মাত্র ১ জন আর ৫ম শ্রেনীতে ৫ জনকে নিয়ে চলছে পাঠদান।

এসময় ৫ম শ্রেনীর মেধাবী শিক্ষার্থী খাদিজা ও নীলুফা আকতার জানান, তাদের ক্লাসে ৯ জন ছাত্রছাত্রী থাকলেও নিয়মিত ক্লাস করেন মাত্র ৫ জন। তারা দাবী করেন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেশী হলে পড়ালেখার মান ভাল হতো। শুধু তাই নয়, তারা চান প্রতিযোগিতামূলক লেখাপড়া।

এদিকে ২য় শ্রেনীতে একজন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাসে পাঠদান করাচ্ছেন সহকারী শিক্ষিকা কাকলী রাণী। এসময় কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, এ ক্লাসে মোট ৪ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে।

বিদ্যালয় সুত্রে জানাগেছে, ৩য় শ্রেনীতে ১০ জন ও ৪র্থ শ্রেনীতে ১১ জন ছাত্রছাত্রীসহ বিদ্যালয়ে মোট ৬১ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। তবে এটি কাগজে কলমে থাকলে বাস্তবে এর কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান মানিক জানান, এ প্রতিষ্ঠানের পাশে অনেক প্রতিষ্ঠান থাকায় এখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কম। তিনি আরও জানান, ইচ্ছে করলেই কোন কর্মকর্তা কোন শিক্ষককে ডেপুটেশন বাতিল করতে পারেনা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এন,এম শরীফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, একজন শিক্ষকের ডেপুটেশন বাতিলের জন্য জেলা পর্যায়ে সুপারিশ করে প্রতিবেদন পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেননি কর্তৃপক্ষ। তিনি আরও জানান, বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কমিটির মাসিক সভায় উপস্থাপন করা হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার বিষয়টি সর্ম্পকে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।