প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান পুণর্ব্যক্ত করে ছেলেমেয়েদের এসব অপশক্তির বিষয়ে সচেতন করতে অভিভাবক, শিক্ষক এবং ধর্মীয় নেতাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা প্রত্যেকে আমাদের শিশু থেকে যুবক শ্রেনী কোথায় যায়, কি করে, কার সঙ্গে মেশে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।যেন কেউ সন্ত্রাস,জঙ্গিবাদ, মাদকাশক্তির সাথে সম্পৃক্ত হতে না পারে। তারা যেন সুস্থ জীবন পায়। আর বাবা-মা, ভাইবোনকে নিয়ে সুখে শান্তিতে কাটাতে পারে তারই পদক্ষেপ নিতে হবে।তিনি বলেন, কোন ছেলে-মেয়ে যেন বিপথে না যায় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আমি সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাই।শেখ হাসিনা শনিবার দুপুরে এখানে জাতির পিতার ৯৯তম জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আযোজিত শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একথা বলেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমী এবং গোপালগজ্ঞ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জাতির পিতার সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে এই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। গোপালগঞ্জের এস এম সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র আরাফাত হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।গোপালগঞ্জের সোনালী স্বপ্ন একাডেমীর চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী প্রিয়ন্তি সাহা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালযের সচিব নাসিমা বেগম, ঢাকা এবং গোপালগঞ্জের বিভাগীয় কমিশনার বজলুল আহমেদ এবং মোখলেসুর রহমান সরকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, তিনবাহিনী প্রধানগণ, আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য নেতৃবৃন্দ, সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ ও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।দিবসটির স্মরণে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলের নামে একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মন্ডল উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তাঁর রচিত এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রকাশিত ‘আমাদের ছোট্ট রাসেল সোনা’ শীর্ষক প্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। এ সময় শিশু একাডেমির পরিচালক আনজির লিটন উপস্থিত ছিলেন।উঠবো জেগে ছুটবো বেগে’ শীর্ষক একটি ভিডিও চিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।পরে প্রধানমন্ত্রী ৭ মার্চ উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সে একটি বই মেলার উদ্বোধন করেন এবং আমার ভাবনায় ৭ মার্চ’ শীর্ষক শিশুদের একটি চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা পরিদর্শন করেন।তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এবং কোটালিপাড়ার দু’জন দুঃস্থ মহিলার মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত শিশু-কিশোরদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া খোকা একদিন হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির আশা আকাঙ্খার ধারক, বাহক। তার নেতৃত্বে সংগ্রামের পথ ধরেই ১৯৭১ সাল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের কবল থেকে মুক্ত হয় স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। সেই খোকা পরে পরিচিত হয়ে উঠেন ‘বাংলার বন্ধু’ বা বঙ্গবন্ধু নামে, পান জাতির জনকের উপাধি।বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের মুক্তিকামী জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দু লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।জাতির পিতা দেশ শাসনের জন্য মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সময়ের মধ্যেই তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্থ একটি প্রদেশকে গড়ে তুলে স্বল্প আয়ের দেশে উন্নীত করে যান।

তিনি যদি আরেকটু সময় পেতেন তা হলে বাংলাদেশ আরো আগেই একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারতো। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দুটি বোন (তিনি এবং বঙ্গবন্ধু ছোট মেয়ে শেখ রেহানা) বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলাম।তিনি বলেন, ছয়টি বছর বিদেশে শরণার্থী হিসেবে কাটাতে বাধ্য হন, তাঁদের দেশে ফিরতে দেয়া হয়নি। একটা দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যদিয়ে স্বজন হারাবার বেদনা নিয়েই তাঁদের দিন কাটে। তারপরেও তাঁর বাবার স্বপ্ন- দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশের একটা শিশুও পথশিশু থাকবে না, সে লক্ষ্য বাস্তায়নেই তাঁর সরকার চেষ্টা করে যাচেছ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটি শিশু লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হবে, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে। এ দেশের প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে, খাদ্য পাবে, রোগে চিকিৎসা পাবে, সুন্দর জীবন পাবে এবং তাঁরা বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলবে।’৭৫ এর পর ২১ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারায় দেশ পিছিয়ে পড়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর আবার ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ফলে আরো ৭ বছর পিছিয়ে যায় এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পরই তাঁর সরকারের নানামুখি পদক্ষেপে দেশে আবারও উন্নয়নের ধারা সূচিত হয়।

সরকার প্রধান বলেন, আজকে আমাদের জন্য একটা সুখের সংবাদ। জাতির পিতার জন্মদিনেই এই সংবাদটা আমরা পেলাম, যে আমাদের এতদিনের প্রচেষ্টার ফলে আজকে বাংলাদেশে, যে বাংলাদেশ স্বল্পন্নোত দেশ ছিল, সেই দেশ জাতিসংঘ কতৃর্ক উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।তিনি বলেন, অর্থাৎ আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলি যেমন-ভারত, শ্রীলংকা এমনকি পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ উন্নয়নশীল দেশ। আমরাও সে কাতারে সামিল হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একধাপ পিছিয়ে পড়েছিলাম। আজকেই আমরা খবর পেয়েছি আমরা আর পিছিয়ে পড়ে নেই। এই অ লের সকল দেশের সঙ্গে সমানতালে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো। আমরা চলতে পারবো।শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার যে স্বপ্ন- ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা সেই পথেই আমরা আরো একধাপ এগিয়েছি। তাই আজকে জাতির পিতার এই জন্মদিনে এই সুখবরটা বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট অর্জন বলে আমি মনে করি। সেজন্য সকলকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন হবে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এরমধ্যে আমরা ক্ষধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। আমি বিশ্বাস করি আমরা তা করতে পারবো।

এসময় তিনি শিশুদের মনোযোগী হয়ে লেখাপড়া করার তাগিদ দেন। উল্লেখ করেন শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারের উপবৃত্তি ও বিশেষ ভাতার কথা।প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক জেলা যেন ভিক্ষকমুক্ত হয় সে ব্যবস্থা করেছি আমরা। গ্রামেও যেন উন্নত জীবন যাপন করা যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। শিশুদের ভবিষ্যত যেন সুন্দর হয় সেজন্য আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করেছি। তারাই এদেশকে গড়ে তুলবে, এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

তাঁর সরকার শিশুদের মন মানসিকতা, শরীর, স্বাস্থ্য সব কিছু উন্নত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা খেলাধূলা, সংস্কৃতি চর্চার দিকে বিশেষভাবে নজর দিয়েছি। বিভিন্ন ধরনের খেলা, এমনকি গ্রামের হারিয়ে যাওয়া খেলাধূলাগুলোও এখন যাতে প্রতিযোগিতা হয় তারও পদক্ষেপ নিয়েছি।প্রধানমন্ত্রী পরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী এবং গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।