বিএনপি এত দিন যেটা সন্দেহ করে আসছিল সেটাই এখন ঘটছে মন্তব্য করে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা মওদুদ আহমদ বলেছেন, ক্ষমতাসীনদের একজন নেতা আজকে বলে দিয়েছেন সরকার বলছে তাদের বিজয় আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তার মানে নীল নকশা অনুযায়ী নির্বাচন হয়ে গেছে, সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা। এখন শুধু গেজেট নোটিফিকেশন হবে। আর শপথ গ্রহণ হবে। তো করে নেন। আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করার কোনো দরকার আছে বলে মনে করি না।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে নাগরিক অধিকার ফোরাম নামে একটি সংগঠন এই সভার আয়োজন করে।শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনার উন্নয়নে-অর্জনে জনগণ খুশি, নির্বাচনে বিজয় একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র ।আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যকে ইঙ্গিত করে মওদুদ আহমদ বলেন, এত দিন আমরা যে সন্দেহ করে আসছিলাম আজকে তারা নিজেরাই হয়তো অজ্ঞাতে বা হয়তো মনে যেটা আছে তা হঠাৎ করে বলে ফেলেছেন। কিন্তু ধরা পড়ে গেছেন। দেশের মানুষের কাছে ধরা পড়ে গেছেন। এটা বাংলাদেশের মাটিতে হতে দেওয়া হবে না। এই নীল নকশা আপনারা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। বলেছেন, ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন হবে, আজকে মার্চ মাসে বলে দিচ্ছেন সব হয়ে গেছে, এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। সুতরাং আপনারা বিরোধী দলে যারা আছেন তারা সবাই বাড়িতে চলে যান। দরকার নেই আপনাদের। এ রকমের মনোভব যে সরকারের থাকে সেই সরকার কত নিচে নেমে গেছে, এখন দেশের মানুষের সঙ্গে যে তাদের কোনো সম্পর্ক নাই এটাই তারা প্রমাণ করেছে।বিএনপির এই নেতা বলেন, বিশ্বময় স্বৈরাচার সরকারগুলোর পতন যেভাবে হয়েছে বর্তমান সরকারের পতনও একইভাবে হবে। এটা ইতিহাসের অবধারিত পরিণতি। এখান থেকে কেউ নিস্তার পায়নি। এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তি যতই বিলম্বিত হবে ততই তার জনপ্রিয়তা বাড়বে। যেদিন তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আসবেন সেদিন থেকে বাংলাদেশের মানুষ রাজপথে নেমে আসবে। সেই জোয়ারে বাংলাদেশে আবার গণতন্ত্র ফিরে আসবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেছেন, এতদিন আমরা যেটা সন্দেহ করে আসছিলাম, আজকে তারা নিজেরাই সেটা হয়ত অজ্ঞাতে বলে ফেলেছেন।আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার বলেছিলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়নে, অর্জনে জনগণ খুশি। নির্বাচনে বিজয় একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার সংকোচ, কোনো প্রকার ভয় আমাদের নেই।বিএনপির বর্জনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। একাদশ সংসদ নির্বাচনও তারা আগের মতোই করতে চাইছে বলে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ।মওদুদ নির্বাচনের একটা নীলনকশা সরকার করেছে। সেই নীলনকশাটি কী? বিরোধী দল যাতে না থাকে, তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। আমরা আবার এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করব, যাতে কোনো দল আর নির্বাচনে না আসে। নোয়াখালীতে নিজের আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী কাদেরের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে মওদুদ বলেন, গতকাল তাদের একজন নেতা বলে দিয়েছেন, তাদের বিজয় এখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।তার মানে নীলনকশা অনুযায়ী নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা, এখন শুধু গেজেট নোটিফিকেশন হবে আর শপথ গ্রহণ হবে।

একতরফা নির্বাচন না করতে সরকারকে হুঁশিয়ার করে বিএনপি নেতা বলেন, এই নীলনকশা আপনারা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। এটা বাংলাদেশের মাটিতে হতে দেওয়া হবে না।বিএনপিকে নাশকতার জন্য দায়ী করে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের জবাবে মওদুদ বলেন, আজকের প্রধানমন্ত্রীর তখন বলেছিলেন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উনার ব্রেন চাইল্ড।ওই ব্যবস্থা আনার জন্য আপনারা ১৭৪ দিন হরতাল করেছিলেন, কত পেট্রোল পাম্প পুড়িয়েছেন, কত শত মানুষের প্রাইভেট কার পুড়িয়েছেন, কত বাস পুড়িয়েছেন, এই শেরাটন হোটেলের মোড়ে বাস পুড়িয়ে ১৪ জনকে হত্যা করেছিলেন, এখন আপনারা এসব ভুলে গেছেন। এখন আমাদের দোষ দেন।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখে গণতন্ত্রের কথার জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের নেতাদের মধ্যে যারা সবচাইতে বেশি গণতন্ত্রের কথা বলে, তাদের মধ্যে ১,২.৩, ৪, ৫ এরা একজনও কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় নাই। আবার গণতন্ত্রের কথা বলেন, বলতে একটু লজ্জা করে না।বিরোধী দলকে সমাবেশ করতে না দেওয়া, মামলা দেওয়া, গ্রেপ্তার করার প্রসঙ্গ তুলে মওদুদ বলেন, এই যে আমি একথাগুলো বলছি- এটা যদি কেউ অসত্য প্রমাণ করতে পারে, তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।সংগঠনের উপদেষ্টা নাছির উদ্দিন হাজারীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় আলোচনা সভায়, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি ফরিদ উদ্দিন, গাজীপুর জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক ভিপি ইব্রাহিম, বক্তব্য রাখেন।