ব্যাংকের সুদের হার নিয়ন্ত্রণে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, বাজারের চাহিদা অনুযায়ীই সুদের হার নির্ধারিত হয়ে থাকে।রোববার সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ উপজেলা পর্যায়ে সেরা ট্যাক্স দাতা পুরস্কার চালুর সুপারিশ করেন।

তিনি আরো বলেন, ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত (এডি রেশিও) নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে।বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে চার লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। আর এবারের বাজেটেও অবকাঠামো খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।এ সময় অর্থমন্ত্রী আরো জানান, এবার তামাক বা জর্দার ওপর ট্যাক্স বাড়বে। আগামী বাজেটে জর্দা বা তামাকের ওপর ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ কর আরোপ করা হতে পারে।এক টাকা কর দিলেই ‘ট্যাক্স কার্ড’ মিলবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, করের আওতা বাড়ানো ও দেশবাসীকে কর দেওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে প্রত্যেক নাগরিককে ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হবে। হাছান মাহমুদের সুপারিশের প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, এক টাকা কর দিলেই ট্যাক্স কার্ড পাওয়া যাবে। যারাই ট্যাক্স দেবেন তাদেরই ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হবে। আগামী বাজেটে করের হার না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সভায় অংশ নেওয়া সংসদ সদস্যরাও। একই সঙ্গে কর ব্যবস্থার সংস্কার করে ব্যক্তিগত আয়ের কর সীমা বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা, ব্যক্তিগত আয়ের সর্বোচ্চ শ্রেণির জন্য করের পরিমাণ কমানো, সকল নাগরিকের জন্য ট্যাক্স কার্ডের প্রচলন করা, ভ্যাট ও করের আওতা বাড়ানোসহ বেশ কিছু সুপারিশও করেছেন তারা। সভায় শিক্ষা খাতের দুরবস্থা, শিক্ষার গুণগত মান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি, চিকিৎসক সঙ্কট ইত্যাদি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।ড. হাছান মাহমুদ বলেন, গত ৯ বছরে করের হার বাড়লেও মাথাপিছু আয়ের তুলনায় আদায় কম। এ আদায় বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।ব্যক্তিগত ট্যাক্স আদায়ের দিকে ধনীরা এগিয়ে। ফলে অনেকেই ট্যাক্স ফাঁকি দেন। এটা কিছুটা কমানো হলে অনেকেই ট্যাক্স দিতে উৎসাহিত হবেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী জনগণের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করলেও সরকারি কোষাগারে জমা দেয় না। ভ্যাট আদায় বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।ব্যাংক ব্যবস্থার দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা সাম্প্রতিককালে আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দার পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। তাই আমাদেরর সতর্ক হতে হবে। আমাদের ব্যাংকগুলোর একজন এক্সকিটিভ, এমডি, সিইও এর বেতন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। যেখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীর বেতন দুই লাখ টাকা। ব্যাংকের নির্বাহীদের এই বেতন অস্বাভাবিক বেশি। এতে লাগাম টানা দরকার।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম করের হার কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, এতে করের আওতা বাড়বে এবং সবাই ট্যাক্স দিতে উৎসাহিত হবে। ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কর মওকুফের আবেদন জানান তিনি। তাছাড়া পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরির উপকারিতার কথা তুলে ধরে তাজুল ইসলাম বলেন, তাদের ট্যাক্স ছাড় দেওয়া প্রয়োজন, যাতে অন্যরা পরিবেশ উপযোগী গ্রিন ফ্যাক্টরি করতে পারে। এসময় বিদ্যুৎ ও পানির অপচয় রোধ করার জন্য সব জায়গায় সেন্সর প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দেন তিনি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মীর শওকত আলী বাদশা উপকূলীয় মাছ চাষ উন্নয়নে আরও বেশি বরাদ্দের দাবি জানান। বাণিজ্যিকভাবে হরিণ চাষের অনুমতির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বাণিজ্যিকভাবে হরিণ চাষ করলে মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সুন্দরবনে চোরাই হরিণ শিকারের সংখ্যাও কমে আসবে।সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বলেন, কঠোর নির্দেশনা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা গ্রামে থাকেন না। উচ্চশিক্ষার অজুহাত ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পরিচয়ে চিকিৎসকরা কর্মস্থলে থাকেন না। ঢাকায় চলে আসেন। এটা চরম বাস্তবতা।