চিঠি 
****
অনেকদিন পর তোমাকে লিখতে বসা!
কেমন আছো জানতে চাইবো না,
তার চেয়ে বলো এখনো কি আমার কথা ভেবে
রাত দুপুরে ঘুম ভেংগে উদাস নয়নে ঝুল
বারান্দায় তাকিয়ে দেখো আকাশ?
সোনাবৌ,
  মনে পড়ে তোমার, যেদিন
আলতা রাঙা পায়ে রক্তিম ঠোঁটে
মৃদু মৃদু স্বলজ্জ হাসি একে
ছন্দময় কোমর দুলিয়ে প্রথম আসা —
সুর্য তখন অস্তাচলে, সন্ধ্যার আলো
সবে মাত্র উঠেছিলো জ্বলে।
তোমার দুচোখের দৃষ্টিতে হয়তো
অন্য বিবাহিতার মতই
ছিল আগামীদিনের
সুখ শান্তিময় জীবনের আশায়
এক স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি।
কিন্তু সূর্যাস্ত রঙে তোমায় দেখে
আমার মনে সুদৃঢ় প্রত্যয় —
জীবনসঙ্গী করে কাছে পাওয়ার
সুনিশ্চিত প্রতিশ্রুতি পেতেই হবে,
নবজীবনের সুর্যোদয়ে
তোমাকে সাথী করতেই হবে।
তুমি তখন তিরিশে
হয়তোবা আরো একটু বেশী
দুচোখে যৌবনের রঙিন  চশমা ।
মনে বিচিত্র রঙের খেলা চলে,
কিম্বা একাকীত্ব!
জীবনটাকে তোমার পদ্যময়
মনে হয়েছিলো হয়ত,
যখন আমাদের টেলিফনে কথা শুরু।
তোমার মন, শরীরের ভাজে
তখন ভোর বেলার
সদ্য ফোটা ফুলের তাজা সুগন্ধ।
মনের পরে —-সোনাবৌ,
সেই দিন গুলোর কথা?
সোনাবৌ,
তোমায় প্রথম যেদিন
সদ্য স্নানান্তে দেখেছি
তুমি অবিন্যস্ত দীর্ঘ চুল
হাওয়ায় উড়িয়ে দড়জায় এসেছিলে–
মধ্য দুপুরের নিস্তব্ধতায় একলা
পাখীর ডাক শুনতে,
হতে পারে আমি আসবো বলে
পথ চেয়ে ছিল অপেক্ষা।
তখন তুমি এই নিষ্ঠুর বাস্তবের
কঠিন পৃথিবী  থেকে অনেক দূরে
যেন বলাকার মত আকাশে
আনন্দে ডানা মেলে উড়ছো
আমায় দেখে।
সোনাবৌ তুমি কি আজও
অনুভব করো এমন করে আমায় ?
কোন এক বর্ষা রাতে —
দাঁড়িয়ে ছিলে বাতায়ন সম্মুখে
মৃদুমন্দ বাতাসে বয়ে আসা
ঝিরেঝিরে বৃষ্টির ফোটা
তোমার কপোলে কপালে
চুম্বনে চুম্বনে তোমায়
রোমাঞ্চিত  করছিলো—
যেন কবিতা লিখছিলো।
তোমার বিন্যস্ত কুঞ্চিত রেশম চুলে
লুটিয়ে পড়া বিন্দু বিন্দু জল,
বিদায়ী মোমের মৃদু আলোতে,
যেন মনে হচ্ছিলো চকচকে
কাঁচের পুঁতি ছড়িয়ে  রয়েছে ।
মাঝে মাঝে অকারনে
তোমার বাড়ীর পথ
হয়ে উঠতো আমার গন্তব্য
তোমাকে দেখতাম, মনে হতো
তুমি হয়তো আমারই পথ চেয়ে আছো।
ভালো  লাগতো ভেবে।
সোনাবৌ,
চিঠি পড়তে বসে বিরক্ত হচ্ছো না তো?
কত কথা জমে আছে,
কত বছর বলা হয় না
রাত জেগে এখনো রই তুমি আমি
কিন্ত ফোনে আর কথা বলা হয় না।
মনে পড়ে শেষ কবে
মন উজাড় করে
কথা বলেছি তুমি আমি?
আজ আর লিখতে ইচ্ছা করছে না,
তোমার জন্য একটা কবিতা লিখেছি
সেটা শুনিয়ে শেষ করি আজ–
“কখনো থাকিনি তোমা হতে দূরে
যৌবনের প্রতিক্ষণে রয়েছে স্মৃতি
টুকরো কষ্ট এসেছিল যত উড়ে
সবটাকে বানিয়ে দিয়েছি চিঠি।
আমার বেঁচে থাকা,আমার বেড়ে ওঠা
জীবন মৃত্যুর সংগে বসবাস
চোখের রেলিং এ বৃষ্টির কিছু ফোটা
যা ছিল ঠিকানা,আজ সব পরবাস ।
লুকিয়ে রেখেছি কান্নার অভ্যেস
মাঝরাতে উঠে গেছি খোলা ছাদে
দেখেছি শহর কান্না হয়েছে নিরুদ্দেশ।
আমার মত কষ্ট ছোটে রোজ
জীবন আমার ছোট গল্পের বই
এখানেই পাবে তুমি  আমার খোজ
তোমাকে ছেড়ে যাবার উপায় কই।”
ভালো থেকো সোনাবৌ।
ইতি,
তোমার সোনা জান।
ঢাকা:১৮ই মার্চ ২০১৮ ইং।