কাঠমন্ডতে প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ২৩ জনের দ্বিতীয় জানাজা শেষে মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার বিএস২১১ ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের মরদেহ হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়।মরদেহগুলো এখন পরিবারের ব্যবস্থাপনায় দাফন করা হবে। এই ২৩ জনের মধ্যে ইউএস-বাংলার পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশীদ এবং কেবিন ক্রু খাজা হোসেন মো. শফি ও শারমিন আক্তার নাবিলা রয়েছেন।

আর যাত্রীদের মধ্যে আছেন ফয়সাল আহমেদ, বিলকিস আরা, বেগম হুরুন নাহার বিলকিস বানু, আখতারা বেগম, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, রকিবুল হাসান, হাসান ইমাম, আঁখি মনি, মিনহাজ বিন নাসির, ফারুক হোসেন প্রিয়ক, তার মেয়ে প্রিয়ন্ময়ী তামারা, মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহিরা তানভিন শশী রেজা, বেগম উম্মে সালমা, মো. নুরুজ্জামান, রফিক জামান, তার স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা, তাদের ছেলে অনিরুদ্ধ জামান।হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষে কফিন নিয়ে স্বজনরা রওনা হন যার যার ঠিকানায়। নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রিয়জনের দাফন সম্পন্ন করবেন তারা। সোমবার (১৯ মার্চ) বিকেল ৪টা ০৫ মিনিটে নেপাল থেকে ২৩ জনের মরদেহবাহী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ প্লেন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। এরপর মরদেহবাহী কফিনগুলো নাম ধরে ধরে অ্যাম্বুলেন্সে ঢোকানো হয়। সেখান থেকে মরদেহগুলো দ্বিতীয় জানাজার জন্য অ্যাম্বুলেন্সযোগে আর্মি স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়। বিকেল ৫টা ৮মিনিটে মরদেহগুলো সেখানে পৌঁছানোর পর ৫টা ২৫মিনিটে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নেপালের বাংলাদেশ দূতাবাসে নিহতদের প্রথম ও বাংলাদেশে বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

আর্মি স্টেডিয়ামের মাঠে ফুল দিয়ে সাজানো মঞ্চে মরদেহগুলো রাখা হয়। সরকারের মন্ত্রী, সচিব, সেনাবাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, আত্মীয়-স্বজনসহ সহ¯্রাধিক মানুষ জানাজায় অংশ নেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তার সামরিক সচিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সংসদ সদস্যদের পক্ষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।এর আগে বিকেল বিমানবন্দরে মরদেহগুলো পৌঁছলে সেগুলো গ্রহণ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল। সকালে নেপালের বাংলাদেশ দূতাবাসে নিহতদের প্রথম নামাজে জানাজা শেষে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে মরদেহগুলো ১০টার দিকে আনা হয়। এরপর মরদেহ ঢাকায় নিতে দুপুর ১২টার দিকে নামে বিমানবাহিনীর কার্গো এয়ারক্রাফট দু’টি। নামার আগে এয়ারক্রাফট দু’টিকে হেভি

ওই দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে এই ২৩ জনের পরিচয়ই এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। নেপালের অনুষ্ঠানিকতা শেষে সোমবার বিকালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি উড়োজাহাজে করে তাদের কফিন ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

বিমানবন্দর থেকে ২৩ জনের কফিন অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে। বিমান দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীদের স্বজনদের মধ্যে যারা কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলেন, তাদেরও আগেরেই দেশে ফিরিয়ে এনে আর্মি স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়। দেশে থাকা পরিবারের অন্য স্বজনরাও দুপুরের পর থেকে আর্মি স্টেডিয়ামে জড়ো হতে শুরু করেন। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে স্টেডিয়ামের পরিবেশ। বিকেল ৫টা ১০ অ্যাম্বুলেন্সগুলো আর্মি স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাঁধে করে কফিন বয়ে নিয়ে মঞ্চের ওপর সারি করে রাখেন।মাওলানা মাহমুদুর রহমানের পরিচালনায় মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, আত্মীয়-বন্ধু-স্বজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পোশার মানুষ আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজায় অংশ নেন।পরে একে একে নাম ডেকে ডেক মরদেহ হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে। ২৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা আলাদা আলাদা ফাইলে তথ্য সংগ্রহ ও ফরম পূরণ করে ছবি ও পাসপোর্টের তথ্য দেখিয়ে মরদেহ হস্তান্তর করেন।