নেপালে ইউএস বাংলা বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত এফ এইচ প্রিয়ক ওরফে ফারুক হোসেন ও তার শিশু কন্যা প্রিয়ন্ময়ীর তামাররা লাশ তাদের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে। সোমবার রাত ৮টার দিকে কফিনবন্দী লাশ দুইটি একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা গ্রামে পৌঁছে। এর আগে স্বামী সন্তানের দাফন অনুষ্ঠানের জন্য দুপুরে প্রিয়কের আহত স্ত্রী অ্যালমুন নাহার এ্যানিকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অপর একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়ি নিয়ে আনে স্বজনরা। এদিন স্বামী-সন্তানের মৃত্যুও সংবাদটি প্রথমবারের মতো এ্যানিকে জানানো হয়। মঙ্গলবার জানাযা শেষে প্রিয়কের বাসার সামনে প্রিয় ফুলের বাগানে প্রিয়ক ও তার শিশু কন্যাকে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হবে।

নিহত প্রিয়কের জেঠাতো ভাই লুৎফর রহমান জানান, নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে গত সোমবার (১২ মার্চ) ইউএস-বাংলার বিমান দূর্ঘটনায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা গ্রামের ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও তার শিশু সন্তান প্রিয়ংময়ী তামারা নিহত হন। একই ঘটনায় প্রিয়কের স্ত্রী অ্যালমুন নাহার এ্যানি এবং প্রিয়কের মামাতো ভাই স্থানীয় ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান ও মেহেদীর স্ত্রী সাঈদা কামরুন নাহার স্বর্ণা আহত হন। নিহত এফ এইচ প্রিয়ক ওরফে ফারুক হোসেন ও তার শিশু কন্যা প্রিয়ন্ময়ীর তামাররা লাশ সোমবার রাত ৮টার দিকে কফিনবন্দী লাশ দুইটি একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা গ্রামে আনা হয়। নিহতদের লাশ বাড়িতে পৌছার খবর পেয়ে তাদের স্বজন ও এলাকাবাসি প্রিয়কদের বাড়িতে ভীড় জমায়। এসময় অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় স্থানীয় আবদুল আউয়াল কলেজ মাঠে ও বেলা ১১টায় মাদবরবাড়ি মাঠে নিহতদের জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। প্রিয়কের মায়ের ইচ্ছানুযায়ী জানাযা শেষে প্রিয়কের বাসার সামনে বেলকুনির পাশে প্রিয়কের প্রিয় ফুলের বাগানে প্রিয়ক ও তার শিশু কন্যাকে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হবে। দাফন কার্যক্রম শেষে এ্যানিকে চিকিৎসার জন্য পূনঃরায় হাসপাতালে ফেরত নেওয়া হবে।

এদিকে, বিমান দূর্ঘটনায় স্বামী ও সন্তান নিহত হওয়ার সংবাদটি গত এক সপ্তাহ নিহত প্রিয়কের স্ত্রী এ্যানিকে জানানো হয়নি। নিহত স্বামী সন্তানের দাফন অনুষ্ঠানের জন্য সোমবার দুপুরে প্রিয়কের আহত স্ত্রী অ্যালমুন নাহার এ্যানিকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অপর একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়ি নিয়ে আনে স্বজনরা। তবে প্রিয়কের মামাতো ভাই ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান অমিত ও অমিতের স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণাকে বাড়িতে আনা হয়নি। একই ঘটনায় আহত হয়ে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাড়িতে আনার পর স্বজনরা প্রথমবারের মতো তার স্বামী ও সন্তান নিহত হওয়ার সংবাদটি জানায়। এসময় এ্যানি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং বারবার মূর্ছা যেতে থাকে। স্বজনরা তাকে সান্তনা দেওয়া চেষ্টা করে। অপরদিকে পুত্র শোকে প্রিয়কের মা ফিরোজা বেগম অনেকটা পাথর হয়ে গেছেন। মাঝেমধ্যেই তিনি ছিলে ও নাতনীর কফিনের পাশে গিয়ে বিলাপ করে কাঁদতে থাকেন। এ্যানি ও প্রিয়কের মায়ের আহাজারিতে পুরো এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।

প্রিয়কের চাচাতো ভাই লুৎফুর রহমানসহ স্বজনরা আরো জানান, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতটি দেখা ও বিদেশ ভ্রমণের জন্য গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা গ্রামের আলোকচিত্রী এফএইচ প্রিয়ক ওরফে ফারুক হোসেন তার তিন বছরের একমাত্র সন্তান প্রিয়ংময়ী তামাররা ও স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানিকে নিয়ে ইউএস বাংলার উড়োজাহাজে চড়ে গত ১২ মার্চ নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা হন। একই বিমানে চড়ে ফারুকের মামাতো ভাই ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান অমিত ও অমিতের স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা আক্তারও নেপাল যাচ্ছিলেন। তাদের পাঁচ দিনের সফর শেষ করে শুক্রবার দেশে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু তাদের সেই আনন্দ সফর পরিণত হয়েছে বিষাদে। সোমবার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নেপালেই নিহত হন ফারুক ও তার মেয়ে প্রিয়ংময়ী। শুক্রবার প্রিয়কের স্ত্রী এ্যানী, মেহেদী ও মেহেদীর স্ত্রী স্বর্ণাকে দেশে ফিরিয়ে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তবে ফিরে আসেনি প্রিয়ক ও তার শিশু কন্যা প্রিয়ংময়ী।