নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ২৩ জনের লাশ ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। নেপালের স্থানীয় সময় সোমবার বেলা ২টার সময় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি কার্গো বিমান ঢাকার উদ্দেশে ২৩ জনের মরদেহের কফিন নিয়ে ত্রিভুবন বিমানবন্দর ত্যাগ করে। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সরাসরি লাশের কফিনগুলো আর্মি স্টেডিয়ামে নেওয়া হবে। বিকাল (সোমবার) চারটায় সেখানে নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজায় অংশ নেওয়া এবং মরদেহ গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যেই আর্মি স্টেডিয়ামে আসা শুরু করেছেন নিহত ২৩ জনের স্বজনেরা।

ইউএস-বাংলার কো-পাইলট পৃথুলা রশীদের বাবা কাজল, মা মাহফুজা, খালা ফিরোজা এবং মামা সাইফুর রহমান এসেছেন। পৃথুলার মামা সাইফুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তার ভাগ্নির লাশ শ্যামলীতে আশা টাওয়ারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বাদ মাগরিব জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।নিহত যাত্রী নজরুল ইসলাম এবং আক্তারা বেগমের স্বজনরাও এসেছেন। তারা জানান, আক্তারা বেগমের লাশ এখান থেকেই রাজশাহীতে নিয়ে যাবেন।আর্মি স্টেডিয়ামে এসেছেন নিহত এসএম মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী সানজিদা আফরিন এবং তার শাশুড়ি। তারা জানিয়েছেন, মাহমুদুর রহমানের লাশ ফরিদপুর নিয়ে যাওয়া হবে। স্টেডিয়ামে আরও এসেছেন ইউএস-বাংলার ২২১ ফ্লাইটের কেবিন ক্রু খাজা হোসেন মোহাম্মদ শাফির তিন খালা শাশুড়ি। নিহত শাফির স্ত্রী সাদিয়া রহমান নেপাল গিয়েছিলেন লাশ শনাক্ত করতে। স্বজনরা জানান, রাজধানীর বেগমবাজারের পারিবারিক কবরস্থানে শাফির মরদেহ দাফন করা হতে পারে।নিহত যাত্রী মতিউর রহমানের বড় ভাই মোকছুদুর রহমান লাশ নিতে এসেছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি ফেনীতে নিয়ে যাওয়া হবে লাশ। এটুকু বলার পর তিনি আর কোনও কথা বলতে পারছিলেন না।

জানাজায় অংশ নিতে এসেছেন একই বিমানের আহত যাত্রী মেহেদী হাসানপ্রিয়কের লাশ নিতে এসেছেন তার মামা তোফাজ্জল হোসেন। আর তামারার লাশ গ্রহণ করবেন প্রিয়কের দুলাভাই আকরাম হোসেন কাজল। তাদের দাফন করা হবে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলার জৈনাবাজার গ্রামে। প্রিয়কের স্ত্রী অ্যানিকে আজই জানানো হবে তার স্বামী ও মেয়ে বেঁচে নেই, বললেন স্বজনরা।ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে আহত মেহেদিও এসেছেন আর্মি স্টেডিয়ামে। তার স্ত্রী স্বর্ণা ও নিহত প্রিয়কের স্ত্রী অ্যানিকে তিনি বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু বাঁচাতে পারেননি প্রিয়ক ও তার মেয়ে তামাররাকে। মেহেদি বলেন, আমি এখন ঢাকা মেডিক্যালে আছি। ২ ঘণ্টার জন্য এসেছি জানাজায় অংশ নিতে। আর কথা বলতে পারছি না।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার একটি বিমান বিধ্বস্ত হলে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৪৯ জন নিহত হন। বাংলাদেশিদের মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ শনাক্ত করে তা আজ দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। বাকি ৩ জনের মরদেহ শনাক্ত করতে ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে ১০ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস। রবিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিমান বিধ্বস্তে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে আলিফউজ্জামান, পিয়াস রায় ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের লাশ এখনও শনাক্ত হয়নি।

এদিকে, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে হিমালয় কন্যা নেপালে ঘুরতে গিয়ে স্বজন হারিয়ে দেশে ফিরেছেন গাজীপুরের আলমুন নাহার অ্যানি। প্টেলন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বেশ কিছুদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সোমবার (১৯ মার্চ) বিকেলে হাসপাতাল ছেড়েছেন তিনি। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শ্রীপুরের গ্রামের বাড়ি নগরহাওলায় পৌঁছান তিনি। সেখানে তাকে তার স্বামী এফএইচ প্রিয়ক ও মেয়ে তামাররা প্রিয়ন্ময়ীর মৃত্যু সংবাদ দেওয়া হয়। তবে তিনি কিছুতেই তা বিশ্বাস করতে চাইছেন না। তিনি বলছেন, আপনারা মিথ্যা বলছেন। ওরা আছে। না হলে তাদের দেখান। বিষয়টি নিশ্চিত করে নিহত প্রিয়কের মামাতো ভাই সানি আহমেদ জানান, বাড়িতে পৌঁছানোর প্রায় ২০ মিনিট পর অ্যানিকে তার স্বামী ও মেয়ের নিহতের খবর জানান তার বান্ধবী রাবেয়া আক্তার রাবু। কিন্তু অ্যানি তার স্বামী সন্তান নিহত হয়েছে তা বিশ্বাস করেনি। এক পর্যায়ে তিনি তার স্বামী সন্তানের মরদেহ দেখতে চান এর আগে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিট থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন অ্যানি। সঙ্গে তার স্বজনরা ছিলেন।