মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে সদ্য স্বল্পোন্নত দেশের গ্র“প (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের যোগ্যতা অর্জনকারী গর্বিত জাতি সোমবার ৪৭ তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করবে।মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

এদিকে, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের দিন সকাল সোমবার ৮টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু কিশোর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সারাদেশে ও বিদেশে একযোগে একই সময়ে শুদ্ধসুরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হবে।সবাইকে স¦-স¦ অবস্থানে থেকে এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এর আগে আহ্বান জানানো হয়েছে।কর্মসূচি সফল করতে শনিবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব(সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলমের সভাপতিত্বে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নেন।এক তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানিয়ে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত চর্চাকে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে গত ২০ জানুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ দেশব্যাপী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে দলগত জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।

এ প্রতিযোগিতায় ৬৪টি জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও মাদ্রাসার ৬২ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৩ জন ছাত্র, ৬৩ লাখ ৭০ হাজার ২৯৫ জন ছাত্রী, মোট ১ কোটি ২৬ লাখ ২২ হাজার ৬৪৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।এছাড়াও গত ১৫ মার্চ জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলকে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার প্রদান করবেন।এ বছর আমাদের মহান স্বাধীনতার ৪৭ বছর পদার্পনের শুভ মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন বিশেষ মাত্রা যোগ হয়েছে। একই সাথে গত বছরের অক্টোবরে একাত্তরের ৭মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া সেই কালজয়ী ভাষণও ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্যর স্বীকৃতি লাভ করে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীকাল প্রত্যুষে রাজধানীতে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে।সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এর পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এব্রাই প্রথম স্বাধীনতা দিবসের দিন সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু কিশোর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সারাদেশে ও বিদেশে একযোগে একই সময়ে শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হবে।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্দ করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলার মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে যে বিভীষিকাময় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল- দীর্ঘ নয় মাসে মরণপণ লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলার দামাল সšাÍনেরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে সে যুদ্ধে বিজয় লাভ করে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে।

১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তনি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকজনের নির্বিচারে গণহত্যা করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।মূহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

আগামীকাল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে এবং সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে।এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্প কলা একাডেমী, শিশু একাডেমীসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ করবে। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং রাতে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহ।দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আগামীকাল সরকারি ছুটির দিন। এদিন রাজধানীর সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকাসহ নানা রঙের পতাকা দিয়ে সাজানো হবে।মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দুই দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑআগামীকাল ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টায় সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ও সকাল ১১টায় টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।এছাড়াও আগামী ২৭ মার্চ বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন ।

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন যুব ও ছাত্র সংগঠন মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ এক বিবৃতিতে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ গৃহীত সকল কর্মসূচি দেশবাসীর সাথে একাত্ম হয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য সংগঠনের সকল শাখাসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ সর্বস্তরের জনগণ ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।