মহান স্বাধীনতা দিবস আজ। বিশ্ব ইতিহাসে বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম ঘোষণার দিন।স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকী উদযাপনের মহাসমারোহ সারাদেশে।শ্রদ্ধা-ভালবাসায় জাতি স্মরণ করছে দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করা বীর শহীদানকে, যার সঙ্গে উৎসব-আনন্দে মুখরিত পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙা অনন্য মুক্তির মুহূর্ত।প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে জাতীয় সংগীত গাইলো পুরো জাতি। সোমবার সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত গেয়ে পুরস্কৃত শতাধিক শিশু-কিশোর জাতীয় সংগীত পরিবেশন শুরু করে। তাদের সঙ্গে জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে উপস্থিত মন্ত্রিসভার সদস্যরা, মাঠে থাকা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সংগঠনের সদস্যরা এবং গ্যালারিতে থাকা হাজার হাজার দর্শক ও অভিভাবক ।এবারই প্রথম স্বাধীনতা দিবসের সকালে সারাদেশে ও বিদেশে একযোগে একই সময়ে শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়।

জাতীয় সংগীতের পর সমাবেশে অংশ নেওয়া শিক্ষর্থীরা জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সমাবেশের উদ্বোধন করেন এবং কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন।পরে শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত গাওয়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তিনি। দেশব্যাপী শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত গাওয়া এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধিকতর কার্যকর করার জন্য চলতি বছরেই প্রথমবারের মতো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের উদ্যোগে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।এর আওতায় স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা পর্যায়ে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তঃশ্রেণী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শুরু করে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা হয়।

সারা দেশের দেড় কোটি শিশু গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ দলগত এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রাথমিক, মাধ্যামিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ১১টি দলের ১১০ জন শিক্ষর্থী চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হয়।প্রথম স্থান অর্জনকারী দলের প্রত্যেক সদস্যকে একটি করে স্বর্ণপদক, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী দলের প্রত্যেক সদস্যকে একটি করে রৌপ্য পদক এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলের প্রত্যেককে ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে।প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম হয় ঢাকার মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল ও কলেজ, দ্বিতীয় হয় খুলনা বিভাগের সরকারি করনেশন বালিকা বিদ্যালয় এবং যুগ্মভাবে তৃতীয় হয় চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবান সদরের মেঘলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ জেলা স্কুল।মাধ্যমিকে প্রথম হয় ময়মনসিংহ জেলা স্কুল, দ্বিতীয় হয় সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের সরকারি এস সি সরকারি বালিকা বিদ্যালয় এবং যুগ্মভাবে তৃতীয় হয় রাজশাহী বিভাগ থেকে পাবনার স্কোয়ার স্কুল ও কলেজ ও ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ।উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে ময়মনসিংহের শহীদ নজরুল ইসলাম কলেজ, দ্বিতীয় হয়েছে চট্টগ্রামের কাপাসগোলা সিটি মহিলা কলেজ এবং তৃতীয় হয়েছে ঢাকা বিভাগের বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজ।পরে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শারীরিক কসরত ও ডিসপে¬ দেখেন।এদিকে সকালে একই সময়ে নরসিংদী মোসলেহ উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়; উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাওনাইন ও পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুনসহ জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়।

ফরিদপুর শেখ জামাল স্টেডিয়ামে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা এবং বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।এ সময় জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া, পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান, জেলা প্রশাসনের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মৃধাসহ রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জালাল স্টেডিয়ামে একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। জেলার ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এতে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদ ও পুলিশ সুপারসহ জেলা প্রশাসনে কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ফেনীর ভাষা শহীদ আবদুস সালাম স্টেডিয়ামে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। এতে অংশ নেয় একশটির বেশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায়, পুলিশ সুপার এএসএম জাহাঙ্গীর আলম, পৌরসভার প্যানেল আশরাফুল আলম গিটারসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জাতীয় সঙ্গীত গান।পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ১০১টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং কর্মীরা বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিক, মো. আলী আশরাফ ভূঁইয়া, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মকবুল হোসেন জেলার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা কর্মচারীরা এতে অংশ নেন।