এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে সোমবার গাজীপুরের টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের মাঝে ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পর পরীক্ষা শেষ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেন্দ্র সচিব ও টঙ্গী পাইলট হাইস্কুল এন্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন ও সহকাারি কেন্দ্র সচিব এম এ ফারুককে বহিস্কার করা হয়েছে। তদস্থলে পার্শ্ববর্তী টঙ্গী সরকারি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালকে কেন্দ্র সচিব ও একজন সহকারি অধ্যাপককে সহকারি কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিষয়টি তদন্ত করতে গাজীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।

পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার ছিল এইচএসসি’র বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা। রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা সকাল ১০টা হতে বেলা ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এদিন নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু পরীক্ষা শুরু হলে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ভুলবশত বাংলা প্রথমপত্রের পরিবর্তে দ্বিতীয়পত্রের সৃজনশীল প্রশ্নপত্র বিতরণ করেন। পরীক্ষার্থীরা এ প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে পরীক্ষার কক্ষ পরিদর্শকদের বিষয়টি অবহিত করে। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে সকল পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের ওই প্রশ্নপত্র গুলো ফেরত নেয়। পরবর্তীতে নির্ধারিত বাংলা প্রথম পত্রের বিষয়ের প্রশ্নপত্র টঙ্গী মডেল থানা থেকে এনে পরীক্ষার্থীদের মাঝে সরবরাহ করা হয়। নির্ধারিত প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে বিতরণ করতে প্রায় একঘন্টা দেরী হওয়ায় পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীরা হট্টগোল শুরু করে। প্রশ্নপত্র বিতরণ করতে বিলম্ব হওয়ার সময়টুকু পুষিয়ে নিতে বেলা ১টার পরিবর্তে ২টা পর্যন্ত পরীক্ষা চালিয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনায় টঙ্গীতে ব্যাপক চাঞ্চল্যে সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী জানান, বাংলা প্রথম পত্রের নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্ন পেয়ে সময় মত পরীক্ষা শেষ হয়। পরে সৃজনশীল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর দেখি বাংলা প্রথম পত্রের পরিবর্তে দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র বিলি করা হয়েছে। বিষয়টি পরে কক্ষে দায়িত্বপালনরত শিক্ষককে জানাই।

এদিকে রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা বেলা ১টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষার্থীরা কেউ পরীক্ষার হল থেকে বাইরে বের না হওয়ায় কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমান অভিভাবকদের মাঝে নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মুখ না খোলায় আশেপাশের অন্য কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ এলাকায় বিভিন্ন গুজব ছড়িূেয় পড়ে। অনেকে পরীক্ষার হলের ভিতরে কি হচ্ছে তা জানতে কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে বেলা ২টার দিকে পরীক্ষার্থীরা হল থেকে বেরিয়ে এলে দেরি হওয়ার কারণ জানতে পারেন অভিভাবকসহ অন্যরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী জানান, বাংলা প্রথম পত্রের নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্ন পেয়ে সময় মত পরীক্ষা শেষ হয়। পরে সৃজনশীল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর দেখি বাংলা প্রথম পত্রের পরিবর্তে দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র বিলি করা হয়েছে। বিষয়টি পরে কক্ষে দায়িত্বপালনরত শিক্ষককে জানাই।

এব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মো. দিদারে আলম মাকসুদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন থানায় নেয়ার আগে শটিং করার বাংলা ২য় পত্রের সৃজনশীল প্রশ্নের প্যাকেটের গায়ে ভুল করে প্রথম পত্র লেখা হয়েছিল। পরীক্ষার দিন ওই প্যাকেট খুলে বিতরন করতে গিয়ে তা ধরা পড়ে। পরে তা থানায় রাখা প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক থেকে আবার তা পরিবর্তন করে আনা হয়। এতে ওই পরীক্ষা শুরু করতে ৫৫মিনিট বিলম্ব হয়েছে। পরে পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত সময় দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।

বহিস্কার ও তদন্ত কমিটি গঠণ ॥
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহ করায় দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার কারণে কেন্দ্র সচিব ও টঙ্গী পাইলট হাইস্কুল এন্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন ও সহকাারি কেন্দ্র সচিব এম এ ফারুককে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। তদস্থলে পার্শ্ববর্তী টঙ্গী সরকারি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালকে কেন্দ্র সচিব ও একজন সহকারি অধ্যাপককে সহকারি কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিষয়টি তদন্ত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাজীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠণ করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্যের মধ্যে একজন হলেন- জেলা শিক্ষা অফিসার এবং অপরজন হলেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শিক্ষা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমার দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড অফিসকেও অবগত করা হয়েছে।