সিলেটে রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকন খুনের মামলায় মূল সন্দেহভাজন তানিয়া আক্তারকে স্বামীসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সোমবার ভোরে কুমিল্লার তিতাস থানাধীন ঘোষকান্দি গ্রামের নিজবাড়ি থেকে তানিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে, রবিবার বিকেলে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার থেকে তার স্বামী ইউসূফ মামুনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে তানিয়াকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের পর সিলেটের উপশহরস্থ পিবিআই’র কার্যালয়ে তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এতে মিরাবাজারের জোড়া খুনের ঘটনায় তারা সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তানিয়া এবং তার স্বামী মামুনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিং করেছেন পিবিআই সিলেটের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল করিম মল্লিক।

রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, রোকেয়া ও তার ছেলে রোকনকে নিজ হাতে হত্যার কথা স্বীকার করেছে তানিয়া ও তার স্বামী। তারা বলেছে, রোকেয়ার সাথে তানিয়ার পরিচয় বছর দুয়েক আগে। সিলেটে মাজারে আসলে সেখানে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার তানিয়ার সাথে পরিচয় হয় রোকেয়ার। তাদের মধ্যে গড়ে উঠে ছোট বোন-বড় বোন সম্পর্ক। পরে নিজের বাসায় তানিয়াকে আশ্রয় দেয় রোকেয়া। সেখানে থেকেই রোকেয়ার মাধ্যমে তানিয়া দেহ ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। রোকেয়ার বাসায় দেহ ব্যবসা ছাড়াও চলত মাদক বিক্রি ও সেবন।

বছর খানেক আগে মামুনের সাথে তানিয়ার বিয়ে হলেও বিষয়টি জানত না মামুন। বিয়ের পর প্রায়ই তানিয়া রোকেয়ার বাসায় আসত। এর পেছনে কারণ ছিল তার দেহ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ততা। মাস খানেক আগে মামুনকে না বলেই রোকেয়া এবং আরো কয়েকজনের সাথে কক্সবাজার ঘুরতে যায় তানিয়া। বিষয়টি বুঝতে পেরে তানিয়ার কাছে জানতে চাইলে মামুনকে সবকিছু খুলে বলে তানিয়া। তানিয়ার দাবি রোকেয়াই তাকে এসবের সাথে সম্পৃক্ত করেছে। এরপর থেকেই রোকেয়ার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে মামুন ও তানিয়া। এর কিছুদিন পরই রোকেয়া ও তার পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা কওে তানিয়া দম্পতি।

পিবিআই’র এ শীর্ষ কর্মকর্তা আরও জানান, পূর্ব পরিকল্পনা থেকেই ঘটনার দিন শুক্রবার সন্ধ্যার দিকেই তানিয়া ও তার স্বামী মামুন রোকেয়া বেগমের বাসায় যায়। এদিন রাতে তারা রোকেয়া এবং তার ছেলে-মেয়েকে খাবারের সাথে ঘুমের ঔষধ খায়িয়ে অচেতন করে। রাত আনুমানিক ২টার দিকে মামুন ছুরি দিয়ে রোকেয়ার গলায় আঘাত করে এবং পরবর্তীতে মৃত্যু নিশ্চিত করতে রোকেয়ার শরীরে শতাধিক ছুরিকাঘাত করে। এরপর তারা রোকেয়ার ছেলে রোকনকে ছুড়িকাঘাত করে এবং গলাটিপে মৃত্যু নিশ্চিত করে। জীবিত উদ্ধার হওয়া রোকেয়া বেগমের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে রাইসাকেও তারা হত্যার উদ্দ্যেশ্যে ঘুমের ঔষধ খাওয়ায় এবং গলা চেপে ধরে। রাইসাও মারা গেছে এমন ধারণায় তারা রাতেই এই বাসা ত্যাগ করে।

হত্যাকাণ্ড শেষে তারা মিরাবাজার খাঁরপাড়ার বাসা থেকে কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় তানিয়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে কোন এক যায়গায় তারা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও কাপড় ফেলে যায় বলেও জানান পিবিআই’র এ কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল দুপুরে নগরীর মিরাবাজার খাঁরপাড়ার মিতালী আবাসিক এলাকার একটি ভবনের নিচতলা থেকে রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রূকনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রোকেয়ার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে রাইসা বেগমকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ওই বাসায় তানিয়া থাকলেও হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সে উধাও ছিল। ঘটনার দিন রাতেই নিহত রোকেয়া বেগমের ভাই জাকির হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন।