আসছে পহেলা বৈশাখকে ঘিরে কোনো ধরনের হামলার হুমকি না নেই তবে সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘেœ বর্ষবরণ উৎসব উদযাপন করতে পারে সেজন্য নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।এবার মঙ্গল শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।আর নারীদের উত্ত্যক্ত করা প্রতিরোধে পুলিশের বিশেষ দল থাকবে পুরো এলাকা জুড়ে।

বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার এসব কথা জানান।পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ওই দিন বাংলামোটর, মগবাজার, কাকরাইল মোড়, জিরো পয়েন্ট, সলিমুল্লাহ হল, সরকারি কর্মচারি হাসপাতাল, নীলক্ষেত ও কাটাবন মোড় দিয়ে কোনো যানবাহন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢুকতে পারবে না।ডিএমপি কমিশনার জানান, এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসে মঙ্গল শোভাযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিতে তীক্ষ্ণ নজরদারিতে থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নারীদের উত্ত্যক্তের ঘটনা এড়াতেও নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।নির্বিঘেœ বর্ষবরণ উৎসব উদযাপনে জননিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, রমনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কেউ তল্লাশি ছাড়া ঢুকতে পারবে না।পহেলা বৈশাখের দিন পবিত্র শবে মেরাজ থাকায় ওই দিন উন্মুক্ত স্থানের সকল অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করার আহ্বান জানান ডিএমপি কমিশনার।

এবার বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। অন্যান্য নিরাপত্তার পাশাপাশি, বিশেষ করে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে মাঠে থাকবে পুলিশের বিশেষ টিম।বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, শোভাযাত্রায় কেউ মুখোশ পরতে পারবে না। তবে হাতে নিয়ে থাকতে পারবে। মাথায় কে কী ব্যবহার করবে, তাদেরও একটা নামের তালিকা চারুকলা কর্তৃপক্ষকে করতে বলা হয়েছে।১৪ এপ্রিল রাতে পবিত্র শবেমেরাজ অনুষ্ঠিত হবে। ওই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদে ইবাদতে মশগুল থাকবে। তাই তাঁদের যাতে কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি না হয়, সে জন্য এবারের পয়লা বৈশাখে ঢাকা মহানগরীতে উন্মুক্ত স্থানের সব অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যেই শেষ করতে হবে বলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন আছাদুজ্জামান মিয়া।একই সঙ্গে ধূমপান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশ এলাকায়।পুরো এলাকায় ভুভুজেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মা-বোন ও শিশুদের বিরক্তির বিষয় হওয়ায় এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, ইউনেস্কো স্বীকৃত মঙ্গল শোভাযাত্রা ঘিরে দেশি-বিদেশি লোকের সমাগম হবে। এটি চারুকলা থেকে বের হয়ে বিভিন্ন রাস্তায় প্রদক্ষিণ করে আবার চারুকলায় এসে শেষ হবে। যে পথে শোভাযাত্রা যাবে, সেসব পথের অলিগলি ও বাসার ছাদে পুলিশ থাকবে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় কেউ মাঝপথে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ শোভাযাত্রার চারদিক ঘিরে থাকবে পুলিশ ও সোয়াটের সদস্যরা।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। এবারে পয়লা বৈশাখ নাগরিকরা যাতে নির্বিঘেœ ও শান্তিতে পালন করতে পারেন, সে জন্য সব ধরনের সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে সতর্কতার জন্যই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কোনো প্রকার হুমকি নেই, যে হুমকির কারণে বৈশাখ উদযাপন নস্যাৎ হতে পারে।এর পরও জরুরি প্রয়োজনে উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য পুলিশের বিশেষ দলসহ অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রস্তুত থাকবে। জরুরি মোকাবিলায় আশপাশের সবকটি হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এর আগে রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, রাজধানীর রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়াও রবীন্দ্রসরোবর, হাতিরঝিলসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় পয়লা বৈশাখ পালন করবেন নাগরিকরা। এসব জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। যেসব এলাকায় পানি রয়েছে, সেখানে বাড়তি হিসেবে নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের টিম প্রস্তুত থাকবে। তিনি বলেন, রমনা পার্কে প্রবেশের জন্য তিনটি, বাইরের জন্য দুটি ও প্রবেশ-বাইরের জন্য দুটি গেট থাকবে। বিকেলের দিকে সব পথ বের হওয়ার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তেমনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য তিনটি ও বের হওয়ার জন্য দুটি গেট থাকবে।

যেসব পথে গাড়ি চলবে না: ডিএমপির ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার এস এম মুরাদ বলেন, মৎস্য ভবন-শাহবাগ-কাঁটাবন,বাংলামোটর-শাহবাগ-টিএসসি, হাইকোর্ট মোড়-দোয়েল চত্বর-শহীদ মিনার, বকশীবাজার-শহীদ মিনার-টিএসসি চত্বর, শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং-দোয়েল চত্বর, নীলক্ষেত-টিএসসি, পল্টন-কদম ফোয়ারা-হাইকোর্ট ক্রসিং ও কাকরাইল-রূপসী বাংলা রোড বন্ধ থাকবে।গাড়ি পার্কিং হবে যেখানেপার্কিং থাকবে যেখানে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের রাস্তা ও পুরাতন এলিফ্যান্ট রোডে উত্তর দিকের গাড়ি, আবদুল গণি রোডে পূর্ব-দক্ষিণের গাড়ি, কার্জন হল হতে বঙ্গবাজার হয়ে ফুলবাড়িয়া দক্ষিণ দিকের গাড়ি, মৎস্য ভবন থেকে কার্পেট গলি ও শিল্পকলা একাডেমির গলিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি,সুগন্ধা ও অফিসার্স ক্লাবের সড়কে ভিআইপি ও মিডিয়ার গাড়ি এবং কাঁটাবন হয়ে নীলক্ষেত হয়ে পলাশী পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিমের গাড়িগুলো পার্কিং থাকবে।গাড়ি চলাচলের পথ:মিরপুর রোড-সায়েন্স ল্যাবরেটরি-নিউমার্কেট-আজিমপুর- বকশীবাজার-চানখাঁরপুল-গুলিস্তান, রাসেল স্কয়ার-সোনারগাঁও- রেইনবো-মগবাজার-মালিবাগ-রাজমনি-ইউবিএল-গুলিস্তান; মহাখালী-সাতরাস্তা-মগবাজার-কাকরাইল-রাজমনি-ইউবিএল-গুলিস্তান;ফার্মগেট-সোনারগাঁও-বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ-খিলগাঁও এবং ফার্মগেট-সোনারগাঁও-বাংলামোটর-মগবাজার-কাকরাইল-রাজমনি-পল্টন-মতিঝিল হয়ে যানবাহন চলাচল করবে।