সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান এ দাবির কথা বলেন।সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের পক্ষ থেকে যে মামলাগুলো করা হয়েছে আগামী দুই দিনের মধ্যে সেগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। দুই দিনের মধ্যে এ দাবি পূরণ না হলে আবারো আন্দোলনে নামার কথা বলেন তারা। কেন্দ্রীয় কমিটির বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল জামাত-শিবির পরিচয় দিতে উঠেপড়ে লেগেছেÑএটি পুরোপুরি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এটি করা হচ্ছে বলে জানান নেতারা।

নেতারা বলেন, এ ধরনের সংবাদ প্রচার করা হলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা যদি এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলি, পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। তারা ইতিবাচক পেয়েছে বলেই আমাদের আন্দোলনে কোনো বাধা দেয়নি। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য আমাদের ভিন্ন পরিচয় দিয়ে আন্দোলন ভিন্নপথে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে।পরিষদ যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ইত্তেফাকে আমাকে জামাত-শিবির পরিচয় দিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১২ সালে সূর্যসেন হলের ৫০৫ নম্বর রুমে আমি থাকতাম কিন্তু ২০১৩ সালে সেখানে থাকা শুরু করি। প্রতিবেদনে আমার বাবার নামও ভুল লেখা হয়েছে। পুরো প্রতিবেদনই মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভরা -সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং আমি মহসীন হলে ছাত্রলীগের সহসভাপতি। আমি সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। কেউ যদি আমাকে সন্দেহ করে থাকেন তাহলে আমার পরিবারে গিয়ে খবর নিতে পারেন।

বিকেল ৫টার মধ্যে ইত্তেফাক পত্রিকা যদি প্রতিবেদন প্রত্যাহার না করে, কাল থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পত্রিকা বর্জন করার কথা বলেন তারা।এ সময় নেতারা বলেন, উপাচার্য স্যারের বাসায় যে হামলা হয়েছে, আমরাও চাই তার বিচার হোক এ জন্য আমরা সহায়তা করতে প্রস্তুত।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল্লাহ নূর, ফারুক আহমেদ প্রমুখ।গত বুধবার কোটা নিয়ে যখন এতোকিছু তাহলে কোটাই থাকবে নাÑকোনো কোটারই দরকার নেই জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব কথা বলেন।এ সময় তিনি বলেন, বিসিএস পরীক্ষায় কোটার দরকার নেই- মেধা অনুযায়ী নিয়োগ হবে আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।গড়ে শতকরা ৭০ ভাগের বেশি মেধাবীরা চাকরি পেয়েছেÑ তারপরও আন্দোলন হওয়ায় বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিলের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকে পরিকল্পিত বলেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এসব করেছে তারা ছাত্র হওয়ার অযোগ্য এর বিচার হবে। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে ঢাবিন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের বাসায় হামলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে চারটি মামলা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ নির্মমভাবে হামলা চালায়। সেই হামলায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন। আবার সেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামেই মামলা করা হয়েছে। আন্দোলন থেকে সরে আসার কয়েকটি দাবির মধ্যে একটি দাবি ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। যদি আগামী দুই দিনের মধ্যে সেই মামলাগুলো প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে প্রয়োজনে আমরা আবার আন্দোলনে যাবো।তিনি আরও বলেন, উপাচার্যের বাড়িতে যারা হামলা করেছে তারা আমাদের আন্দোলনকারী ছাত্র নয়। যারা ন্যক্কারজনকভাবে হামলা করেছে, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রীকে সংগঠনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে সম্মেলনে নুরুল হক নুর বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।কারণ, যারা আহত হয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, গতকাল (রবিবার) তাদের ফ্রি চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও এতদিন ধরে আহতরা নিজ খরচে যে চিকিৎসা করেছেন, সে টাকাও ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। সেজন্য আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছি। কিন্তু একটি কুচক্রী মহল আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কোটা সংস্কার আন্দোলনের পেছনে কোনও ধরনের ষড়যন্ত্র খুঁজে পায়নি।এ সময় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার একটি খবরের প্রতিবাদ জানিয়ে যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক আহমদ বলেন, দৈনিক ইত্তেফাক আমাদের ন্যায্য দাবি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে আমাদের চার নেতার (একজন আহ্বায়ক ও তিন যুগ্ম আহ্বায়ক) নামে মিথ্যা ও বানোয়াট খবর ছেপেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে এই পত্রিকাটির রিপোর্টার, বার্তা সম্পাদক এবং সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টরা যদি আজ বিকাল ৫টার মধ্যে এই খবর প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ না করেন, তাহলে আগামীকাল থেকে দেশের সকল কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা-উপজেলা-মহানগরসহ বিভিন্ন জায়গায় এই পত্রিকাটি বর্জন করা হবে।সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান প্রমুখ।